উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তি

উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তি ও মুসলিম ব্যক্তি আইন: একটি বিশ্লেষণ

মুসলিম ব্যক্তি আইন, আরবীতে ‘মু’আমালাত’ নামে পরিচিত, সামাজিক বিষয়াদি নিয়ন্ত্রণকারী বিধানাবলী। এটি মানুষের দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন দিক, পারিবারিক, ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনের বিধান নির্ধারণ করে। সাধারণ আইনের ‘ব্যক্তিগত আইন’ এর ইসলামি সমতুল্য হলো ‘মু’আমালাত’ বা সামাজিক আইন। তাই ‘মুসলিম আইন’ বলতে মুসলমানদের ব্যক্তিগত, নাগরিক ও সামাজিক আইন বুঝায়।

ইসলামী শরীয়া অনুসারে, মুসলিম আইন হলো আল্লাহর ওহী-প্রেরিত আদেশ। এটি মুসলিম রাষ্ট্রের নির্দেশিকা এবং মুসলিম সমাজের নিয়ন্ত্রক। বাংলাদেশে, আদালত সকল ক্ষেত্রে মুসলিম আইন প্রয়োগ করে না; শুধু নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আদালতের এই ক্ষমতা সংসদ কর্তৃক প্রণীত আইন ও বিধিবদ্ধ আইন থেকে এসেছে।

বাংলাদেশে, উত্তরাধিকার, জমি ক্রয়-বিক্রয়, দখল, বিবাহ, তালাক, ভরণপোষণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে মুসলিম আইন প্রয়োগ হয়। মুসলিম আইনশাস্ত্র বোঝার জন্য মুসলিম সমাজের প্রশাসনিক ও বিচারিক পদ্ধতি, শরীয়ার লক্ষ্য ও কার্যকারিতার বিশ্লেষণ প্রয়োজন।

  • *প্রধান মুসলিম আইনসমূহ:**
  • বিবাহ সংক্রান্ত আইন
  • ভরণপোষণ ও অভিভাবকত্ব
  • সম্পত্তির উত্তরাধিকার
  • ওয়াক্ফ ও দাতব্য
  • অগ্রক্রয় আধিকার
  • *বিবাহ:** ইসলামে বিবাহ একটি আইনগত, সামাজিক ও ধর্মীয় চুক্তি। বিবাহের উদ্দেশ্য: যৌনকামনার বৈধতা, স্বাভাবিক ভালোবাসা, সুরক্ষা ও পরিবার গঠন। বিবাহ নিষিদ্ধ ক্ষেত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে রক্তসম্পর্ক, জ্ঞাতিসম্পর্ক, পালক-সম্পর্ক, পঞ্চম স্ত্রী গ্রহণ, সাক্ষীর অনুপস্থিতি, ধর্মীয় পার্থক্য, অবৈধ মিলন, ইদ্দত পালনরত নারী ইত্যাদি। একজন মুসলিম পুরুষ ‘কিতাবীয়া নারী’ কে বিবাহ করতে পারলেও, একজন মুসলিম নারী অমুসলিম পুরুষকে বিবাহ করতে পারে না।
  • *মহর:** স্ত্রীর প্রতি স্বামীর সম্মানের প্রতীক। বিবাহের একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। মহরের পরিমাণ স্বামীর আর্থিক সামর্থ্য ও স্ত্রীর সামাজিক মর্যাদার উপর নির্ভর করে।
  • *বহুবিবাহ:** একজন মুসলিম পুরুষ একসাথে সর্বোচ্চ চারজন স্ত্রী রাখতে পারে। ১৯৬১ সালের পারিবারিক আইন অধ্যাদেশে কিছু সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হয়েছে। মুসলিম নারীর বহুপতিগ্রহণ অবৈধ।
  • *তালাক:** বিবাহ বিচ্ছেদ। তালাক হতে পারে স্বামীর ইচ্ছায়, পারস্পরিক সম্মতিতে বা আদালতের নির্দেশে। ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশে তালাকের নিয়মাবলী নির্ধারিত।
  • *ভরণপোষণ ও অভিভাবকত্ব:** ভরণপোষণে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ও শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত। স্ত্রী, সন্তান, পিতামাতা ইত্যাদি ভরণপোষণের অধিকারী। অভিভাবকত্বের দায়িত্ব সাধারণত পিতার থাকে।
  • *নাবালকত্ব:** ১৬ বছর বয়স পর্যন্ত। প্রজনন ক্ষমতা অর্জনে এর ব্যতিক্রম হতে পারে।
  • *উত্তরাধিকার:** মুসলিম উত্তরাধিকার আইনে সম্পত্তি বণ্টন নির্দিষ্ট। পুত্র পায় দ্বিগুণ, কন্যা পায় অর্ধেক। দাস, কাফের, ধর্মান্তরিত ব্যক্তি উত্তরাধিকারের অধিকারী নয়।
  • *অসিয়ত ও হিবা:** মৃত্যুপূর্ব সম্পত্তি হস্তান্তর। অসিয়তে এক-তৃতীয়াংশের বেশি দান করা যায় না। হিবা হলো বিনিময় ছাড়া সম্পত্তি হস্তান্তর।
  • *ওয়াক্ফ:** ধর্মীয় বা জনহিতকর কাজের জন্য সম্পত্তি দান।
  • *অগ্রক্রয় আধিকার (শুফ্আ):** নিকট প্রতিবেশী বা অংশীদারের সম্পত্তি ক্রয়ের অগ্রাধিকার।

উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও এই আইনসমূহ প্রযোজ্য, তবে তাদের সামাজিক ও আর্থিক অবস্থান বিবেচনা করে আদালত কিছু বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এই আইনগুলির যথাযথ প্রয়োগ ও বোঝার মাধ্যমে উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিরা সঠিকভাবে তাদের আইনগত অধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন।

মূল তথ্যাবলী:

  • মুসলিম ব্যক্তি আইন সামাজিক জীবনের বিধান নির্ধারণ করে।
  • বিবাহ, তালাক, উত্তরাধিকার, ভরণপোষণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে মুসলিম আইন প্রযোজ্য।
  • মহর স্ত্রীর প্রতি স্বামীর সম্মানের প্রতীক।
  • একজন মুসলিম পুরুষ সর্বোচ্চ চারজন স্ত্রী রাখতে পারে।
  • উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও মুসলিম ব্যক্তি আইন প্রযোজ্য।

গণমাধ্যমে - উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তি

২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

মো. নাহিদ ইসলাম সড়ক দুর্ঘটনায় উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিদের বিচারের অভাবের কথা উল্লেখ করেছেন।