ওস্তাদ আয়েত আলী খাঁ (২৬ এপ্রিল ১৮৮৪ - ২ সেপ্টেম্বর ১৯৬৭) ছিলেন উপমহাদেশের একজন বিশিষ্ট উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত শিল্পী, সেতার ও সুরবাহার বাদক। তিনি মাইহার ও রামপুর রাজ্যের রাজসঙ্গীতজ্ঞ হিসেবেও কর্মরত ছিলেন। তার জন্ম ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির (বর্তমান বাংলাদেশ) ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার শিবপুর গ্রামে। তার পিতা সবদর হোসেন খাঁ ছিলেন একজন সঙ্গীতজ্ঞ। আয়েত আলীর দুই অগ্রজ ফকির আফতাবউদ্দিন খাঁ ও ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁও উপমহাদেশের প্রখ্যাত সঙ্গীত ব্যক্তিত্ব ছিলেন।
দশ বছর বয়সে তিনি তার বড় ভাই ফকির আফতাবউদ্দিন খাঁর কাছে সঙ্গীতশিক্ষা শুরু করেন। সাত বছর তালিম গ্রহণের পর তিনি মাইহারে গিয়ে অপর অগ্রজ আলাউদ্দিন খাঁর কাছে তালিম নেন। সেখানে তিনি প্রথমে সেতার এবং পরে সুরবাহার শেখেন। আলাউদ্দিন খাঁ তাকে পরে নিজগুরু ওস্তাদ ওয়াজির খাঁর নিকট রামপুরে পাঠান, যেখানে তিনি তেরো বছর সঙ্গীত সাধনা করেন।
শিক্ষা সম্পন্ন করে তিনি মাইহার রাজ্যের সভাবাদক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। আলাউদ্দিন খাঁর সাথে মিলে তিনি ঐকতান-বাদকদল গঠন করেন। পরে তিনি রামপুরের রাজদরবারেও সভাবাদক হন। ১৯৩৫ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আমন্ত্রণে তিনি শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতীর যন্ত্রসঙ্গীত বিভাগের প্রধান হিসেবে যোগদান করেন, কিন্তু কয়েক মাস পর অসুস্থতার কারণে চাকরি ছেড়ে ফিরে আসেন।
আয়েত আলী উচ্চাঙ্গসঙ্গীতের ঐতিহ্য রক্ষা ও প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ‘আলম ব্রাদার্স’ নামে একটি বাদ্যযন্ত্র তৈরির কারখানা স্থাপন করেন এবং গবেষণার মাধ্যমে মনোহরা ও মন্দ্রনাদ নামে দুটি নতুন বাদ্যযন্ত্র উদ্ভাবন করেন। সুরবাহার ও সরোদ যন্ত্রেরও নতুন রূপ দেন এবং আলাউদ্দিন খাঁর পরামর্শে চন্দ্রসারং যন্ত্রটিও তৈরি করেন। তিনি বারিষ, হেমন্তিকা, আওল-বসন্ত, ওমর-সোহাগ, শিব-বেহাগ, বসন্ত-ভৈরোঁ, মিশ্র সারং প্রভৃতি রাগেরও স্রষ্টা। বিশুদ্ধ রাগসঙ্গীতের চর্চা, সংরক্ষণ ও প্রসারের জন্য ১৯৪৮ সালে কুমিল্লায় এবং ১৯৫৪ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আলাউদ্দিন মিউজিক কলেজ নামে দুটি সঙ্গীত প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন। ১৯৫১ থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান রেডিওতে নিয়মিত সুরবাহার বাজান।
সঙ্গীতে অসাধারণ অবদানের জন্য তিনি গভর্নর পদক (১৯৬০), পাকিস্তান সরকারের তমঘা-ই-ইমতিয়াজ খেতাব (১৯৬১), রাষ্ট্রীয় পুরস্কার প্রাইড অব পারফরম্যান্স (১৯৬৬), বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী (মরণোত্তর, ১৯৭৬) এবং স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার (মরণোত্তর, ১৯৮৪) লাভ করেন।