আয়েশা খানম: একজন অসাধারণ নারী নেত্রী
আয়েশা খানম (১৯৪৭-২০২১) বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট সমাজকর্মী, নারী অধিকার কর্মী এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তিনি তার জীবন নারীদের ক্ষমতায়ন এবং মানবাধিকারের জন্য উৎসর্গ করেছিলেন।
১৯৪৭ সালের ১৮ই অক্টোবর নেত্রকোণার গাবরাগাতি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন আয়েশা খানম। তার পিতার নাম গোলাম আলী খান এবং মাতার নাম জামাতুন্নেছা খানম। স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগ থেকে।
ছাত্র জীবনেই আন্দোলনে জড়িত হন আয়েশা খানম। নেত্রকোণা গার্লস হাই স্কুলে পড়াকালীন শরীফ শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। পরবর্তীতে মমিনুন্নেসা গার্লস কলেজ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ইউনিয়নের সক্রিয় সদস্য ছিলেন। ১৯৬৯ সালে রোকেয়া হল ছাত্রী সংসদের সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৭০ সালে সহসভাপতি নির্বাচিত হন। এছাড়াও, ১৯৭০ সালে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সহসভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে আয়েশা খানম কমিউনিস্ট পার্টি পরিচালিত শরণার্থী শিবির ও মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। আগরতলায় চিকিৎসাসেবায় প্রাথমিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবায় কাজ করেন এবং 'স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র' থেকে বক্তৃতা দান করেন।
স্বাধীনতার পর নারীমুক্তির আন্দোলনে নিজেকে নিয়োজিত করেন। মহিলা পরিষদের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সাংগঠনিক সম্পাদক, সহসাধারণ সম্পাদক, সাধারণ সম্পাদক এবং ২০০৮ সাল থেকে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৯৩ সালের ভিয়েনা মানবাধিকার সম্মেলনসহ অনেক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আইন সংস্কারের আন্দোলন, UFC বাস্তবায়ন, সিডও সনদ বাস্তবায়ন আন্দোলন, নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের আন্দোলন জোরদার করা ও জাতীয় এজেন্ডায় পরিণত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বাংলাদেশ সরকারের জাতীয় নারী উন্নয়ন পরিষদের সদস্য এবং UNWOMEN এবং UNDP-র অ্যাডভাইজরি কমিটির সদস্য ছিলেন।
আয়েশা খানম ২০০২ সাল থেকে ৬৮টি সংগঠনের প্লাটফর্ম সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির সেক্রেটারিয়েটের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ‘নারীর মানবাধিকার ও ক্ষমতায়নের পথে’ (২০১৫) এবং ‘মুক্তিযুদ্ধদিনের স্মৃতি’ (২০০১) নামে দুটি গ্রন্থ রচনা করেন। ২০১৯ সালে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ২০২১ সালের ২রা জানুয়ারি ৭৪ বছর বয়সে ঢাকার বারডেম হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। নেত্রকোণার নিজ গ্রামে তাকে সমাহিত করা হয়।