আরপিও ৯১(এ): সংশোধনী ও বিতর্কের ইতিহাস
বাংলাদেশের নির্বাচনী ব্যবস্থার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও)। এই আইনের ৯১(এ) ধারা নিয়ে সম্প্রতি ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা এবং বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। এই ধারাটি নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ক্ষমতা নিয়ে।
৯১(এ) ধারার মূল বিষয়বস্তু:
মূলত, ৯১(এ) ধারা নির্বাচন কমিশনকে এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচন বন্ধ করার ক্ষমতা দান করে, যেখানে বলপ্রয়োগ, ভীতিপ্রদর্শন, চাপ সৃষ্টিসহ বিভিন্ন অপকর্মের কারণে যুক্তিযুক্ত, ন্যায়সংগত ও আইনানুগভাবে নির্বাচন পরিচালনা করা সম্ভব হয় না। এই ক্ষমতা একক ভোটকেন্দ্র থেকে শুরু করে সম্পূর্ণ নির্বাচনী এলাকায় প্রযোজ্য।
সংশোধনী ও বিতর্ক:
২০২৩ সালে আরপিওর ৯১(এ) ধারায় একটি সংশোধনী আনা হয়। এই সংশোধনীতে 'ইলেকশন' শব্দটির পরিবর্তে 'পোলিং' শব্দ ব্যবহার করা হয়। বিরোধীদের দাবি, এই পরিবর্তনের ফলে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা কমে গেছে। তাদের মতে, 'ইলেকশন' শব্দটি নির্বাচনের পুরো প্রক্রিয়াকে নির্দেশ করে, যখন 'পোলিং' শুধু ভোটগ্রহণের দিনকে বোঝায়। অর্থাৎ, সংশোধনীর পর ইসি শুধু ভোটগ্রহণের দিন অনিয়মের কারণে ভোট বন্ধ করতে পারবে, ভোটগ্রহণের পূর্বে নয়।
ইসির দাবি:
নির্বাচন কমিশন এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তাদের দাবি, সংশোধনীর ফলে ইসির ক্ষমতা কমেনি বরং বেড়েছে। নতুন ধারা ৯১(এ)(এ) যোগ করা হয়েছে, যার মাধ্যমে অনিয়মের অভিযোগ পেলে গেজেট প্রকাশ স্থগিত রেখে তদন্ত করার ক্ষমতা ইসিকে দেওয়া হয়েছে। তবে, মূল ৯১(এ) ধারায় কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি বলে তাদের দাবি।
বিভিন্ন দলের বক্তব্য:
বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ ও নির্বাচন বিশ্লেষকদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। কিছু সংগঠন মনে করে সংশোধনীর ফলে ইসির ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করা আরো কঠিন হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে, কিছু সংগঠন ইসির দাবি সমর্থন করে।
ঘটনার সময়কাল:
আরপিও সংশোধনী বিলটি ২০২৩ সালের ৪ জুলাই সংসদে পাস হয়। এর আগে, মার্চ ও মে মাসে মন্ত্রিসভায় এই সংশোধনীকে নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়।
উপসংহার:
আরপিও ৯১(এ) ধারার সংশোধনী নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক রয়েছে। এই ধারাটির সংশোধনের প্রভাব কী হবে, তার প্রকৃত প্রভাব ভবিষ্যৎ নির্বাচনেই বোঝা যাবে।