আব্দুল কাদের জিলানী: ইসলামী আধ্যাত্মিকতার এক প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব
আব্দুল কাদের জিলানী (ফার্সি: عبدالقادر گیلانی, আরবি: عبدالقادر الجيلاني) ছিলেন একজন প্রভাবশালী সুন্নি মুসলিম ধর্মপ্রচারক, তপস্বী, আইনজ্ঞ এবং হাম্বলী মাযহাবের ধর্মতত্ত্ববিদ। তিনি ইসলামী আধ্যাত্মিকতার অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব হিসেবে বিশ্বব্যাপী সুপরিচিত। সূফীরা তাকে 'বড়পীর হযরত আব্দুল কাদের জিলানী' নামে সম্বোধন করেন। তার আধ্যাত্মিক মর্যাদার জন্য 'বড়পীর' উপাধিতে ভূষিত হন। ইরাকের জিলান শহরে জন্মগ্রহণের কারণে 'জিলানী' উপাধি লাভ করেন। আবু মোহাম্মদ মুহিউদ্দীন ও অন্যান্য সম্মানসূচক নামেও তিনি পরিচিত ছিলেন।
হিজরী ৪৭০ সনের রমজান মাসের ১ তারিখে (খ্রিষ্টাব্দ ১০৭৭ বা ১০৭৮ সাল) বাগদাদের জিলান শহরে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম ছিল আবু সালেহ মুছা জঙ্গী এবং মাতার নাম ছিল সাইয়েদা উম্মুল খায়ের ফাতেমা। তার পিতা ইমাম হাসান ইবনে আলীর বংশধর এবং মাতা ইমাম হোসাইন ইবনে আলীর বংশধর বলে জানা যায়।
প্রাথমিক জীবন গিলানে কাটিয়ে ১০৯৫ সালে আঠারো বছর বয়সে তিনি বাগদাদে যান। সেখানে আবু সাঈদ মুবারক মাখযুমী এবং ইবনে আকিলের কাছে হাম্বলী মাযহাব অধ্যয়ন করেন। আবু মুহাম্মদ জাফর আল-সাররাজের কাছে হাদিস অধ্যয়ন করেন। শিক্ষা সম্পন্ন করে ইরাকের মরুভূমিতে পঁচিশ বছর তপস্যা করেন।
শিক্ষা-দীক্ষায় পূর্ণতা অর্জনের পর, তিনি ইসলাম ধর্ম প্রচারে নিজেকে নিয়োজিত করেন। তার বক্তৃতা ও মাহফিলগুলিতে মুসলমানদের পাশাপাশি অমুসলিমরাও অংশগ্রহণ করতো। তার প্রচারের মাধ্যমে অনেক অমুসলিম ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন বলে জানা যায়।
আব্দুল কাদের জিলানী কাদেরিয়া তরিকা প্রতিষ্ঠা করেন, যা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। যুক্তরাজ্য, আফ্রিকা, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া, আফগানিস্তান, ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, বলকান, রাশিয়া, ফিলিস্তিন, চীন এবং পূর্ব ও পশ্চিম আফ্রিকাসহ বিশ্বের বহু স্থানে কাদেরিয়া তরিকার অনুসারী রয়েছে।
তিনি কাব্য, সাহিত্য, ইতিহাস, দর্শন, ভূগোল ইত্যাদি বিষয়ে পণ্ডিত ছিলেন। তার রচিত বহু গ্রন্থ রয়েছে।
হিজরী ৫৬১ সালের ১১ রবিউসসানী (খ্রিষ্টাব্দ ১১৬৬ সাল) তিনি ৯১ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। তার ওফাত দিবস সারা বিশ্বের সূফীরা গুরুত্বের সাথে পালন করে থাকেন এবং এটি 'ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহাম' নামে পরিচিত। প্রতি আরবি মাসের ১০ তারিখ দিবাগত রাত গেয়ারভী শরীফ পালন হয়। ১ রমজান তার জন্মদিন এবং ১১ রবিউস সানি তার মৃত্যুবার্ষিকী হিসাবে পালিত হয়। ভারতীয় উপমহাদেশে, তার ওরশ বা মৃত্যুবার্ষিকীকে গেয়ারভী শরীফ বা সম্মানিত দিবস বলা হয়।