হো চি মিন সিটি, ভিয়েতনামের অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রবিন্দু, দেশটির সবচেয়ে জনবহুল শহর। পূর্বে সাইগন নামে পরিচিত এই শহরটি সায়গন নদীর তীরে অবস্থিত, দক্ষিণ চীন সাগর থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে। ১৭ শতকের পূর্বে প্রে নোকোর নামে পরিচিত এলাকাটি পরবর্তীতে ফরাসি উপনিবেশ কোচিনচিনার রাজধানী হয়। ১৯৫৪ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত এটি দক্ষিণ ভিয়েতনামের রাজধানী হিসেবে পরিচিত ছিল। ১৯৭৫ সালে উত্তর ভিয়েতনামের সাথে একীভূত হওয়ার পর, এর নামকরণ করা হয় ভিয়েতনামের প্রখ্যাত নেতা হো চি মিনের নামানুসারে।
ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে হো চি মিন সিটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক কেন্দ্র। ২০২৩ সালে এর জনসংখ্যা প্রায় ১ কোটি। জনসংখ্যার বেশিরভাগই জাতিগত ভিয়েতনামী, তবে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক চীনা (হোয়া) সম্প্রদায়ও বসবাস করে। শহরটিতে তাওবাদ, কনফুসিয়ানিজম, মহাযান বৌদ্ধধর্ম এবং ক্যাথলিক ধর্মের অনুসারীদের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।
অর্থনীতির ক্ষেত্রে হো চি মিন সিটি ভিয়েতনামের প্রাণকেন্দ্র। এটি দেশের মোট জিডিপির প্রায় এক-চতুর্থাংশ অবদান রাখে। তৈরি পোশাক, বস্ত্র, জুতা, ইলেকট্রনিক্স এবং তথ্য প্রযুক্তি খাতের প্রতিষ্ঠানের ঘনত্ব উল্লেখযোগ্য। ট্যান সন নাত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং সায়গন বন্দর শহরটিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবহন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলেছে। ২০২৫ সালে লং থান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর চালু হলে পরিবহন ব্যবস্থায় আরও উন্নতি সাধিত হবে।
ঐতিহাসিক দিক থেকে হো চি মিন সিটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফরাসি উপনিবেশিক যুগের স্মৃতিচিহ্ন, ভিয়েতনাম যুদ্ধের চিহ্ন, এবং প্রাচীন মন্দিরগুলো এখানে পর্যটকদের আকর্ষণ করে। স্বাধীনতা প্রাসাদ, যুদ্ধের স্মৃতি সংগ্রহশালা, বেন থান বাজার, নোট্রে-ডেম ক্যাথিড্রাল উল্লেখযোগ্য ঐতিহাসিক স্থান।
সাম্প্রতিককালে, হো চি মিন সিটি দ্রুত উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। নতুন আবাসিক এলাকা, আধুনিক অবকাঠামো নির্মাণ এবং পরিবেশগত সুরক্ষায় গুরুত্ব আরোপ করা হচ্ছে। তবে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং বন্যার মতো পরিবেশগত ঝুঁকি ও এখানে উল্লেখযোগ্য।