মিশরের ইতিহাসে হোসনি মোবারকের নাম স্মরণীয় হয়ে থাকবে একজন সামরিক নেতা এবং দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা রাষ্ট্রপতি হিসেবে। ১৯২৮ সালের ৪ঠা মে মিসরের উত্তরাঞ্চলে কাফর আল-মেসেলহায় জন্মগ্রহণ করেন এই ব্যক্তি। তার বাবা ছিলেন বিচার মন্ত্রণালয়ের ইন্সপেক্টর। তিনি মিশরীয় জাতীয় সামরিক একাডেমি, বিমানবাহিনী একাডেমি এবং মস্কোর ফ্রুনযে জেনারেল স্টাফ একাডেমিতে শিক্ষা লাভ করেন। ১৯৪৯ সালে মিলিটারি একাডেমি এবং ১৯৫০ সালে বিমান বাহিনী একাডেমি থেকে স্নাতক হন। ১৯৭২ সালে মিশরীয় বিমান বাহিনীর কমান্ডার নিযুক্ত হন এবং ১৯৭৩ সালের আরব-ইসরাঈল যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭৫ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আনোয়ার আল-সাদাত তাকে উপ-রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিযুক্ত করেন।
১৯৮১ সালের ৬ই অক্টোবর প্রেসিডেন্ট সাদাতের হত্যার পর হোসনি মোবারক রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি প্রায় ৩০ বছর মিশরের রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন (১৯৮১-২০১১)। এই সময়কালে তিনি দেশে একটি অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবন প্রকল্প শুরু করেন এবং ১৯৭৯ সালে ইসরাইলের সাথে সাক্ষরিত শান্তিচুক্তি বজায় রাখেন। তিনি বৃহৎ শক্তিগুলির প্রতি “ইতিবাচক নিরপেক্ষতা” নীতি গ্রহণ করেন এবং মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৮৭, ১৯৯৩, এবং ১৯৯৯ সালে তিনি পুনরায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। তার শাসনামলে ইসলামী মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করা হয়। ২০০৫ সালে মিশরে প্রথমবারের মতো বহুদলীয় রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে তিনি বিজয়ী হন।
২০১১ সালের জানুয়ারিতে মিশরে গণবিক্ষোভ শুরু হলে , মোবারক ১৮ দিন পর ক্ষমতা ত্যাগ করেন। তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভকারীদের হত্যা এবং দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়। ২০১২ সালে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয় যদিও পরে আপিল আদালত এই দণ্ড বাতিল করে। তিনি ২০১৭ সালে মুক্তি পান এবং ২০২০ সালের ২৫শে ফেব্রুয়ারি ৯১ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।