হাকিম আজমল খাঁ: একজন চিকিৎসক, রাজনীতিবিদ ও স্বাধীনতা সংগ্রামী
হাকিম আজমল খাঁ (১৮৬৮-১৯২৭) ছিলেন একজন বিশিষ্ট ভারতীয় চিকিৎসক, রাজনীতিবিদ এবং স্বাধীনতা সংগ্রামী। তিনি দক্ষিণ এশিয়ার ঐতিহ্যবাহী ইউনানি চিকিৎসাবিদ্যায় অত্যন্ত পারদর্শী ছিলেন। দিল্লীতে তিবিয়া কলেজ স্থাপনের মাধ্যমে তিনি বিংশ শতাব্দীতে ভারতে ইউনানি চিকিৎসার পুনর্জাগরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষা:
১৮৬৮ সালে (১৭ শাওয়াল ১২৮৪ হিজরি) জন্মগ্রহণকারী আজমল খাঁর পরিবার প্রজন্ম ধরে ইউনানি চিকিৎসা চর্চা করে আসছিল। তার দাদা হাকিম শরিফ খান মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের চিকিৎসক ছিলেন এবং শরিফ মঞ্জিল নামে একটি চিকিৎসা কেন্দ্র ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন। আজমল খাঁ ঐতিহ্যবাহী ইসলামি শিক্ষা লাভ করেন এবং আরবি ও ফারসি ভাষা শিখেন। এরপর দিল্লীর সিদ্দিকি দাওয়াখানার হাকিম আবদুল জামিলের কাছে ইউনানি চিকিৎসাবিদ্যায় দক্ষতা অর্জন করেন।
চিকিৎসা ও রাজনৈতিক জীবন:
চিকিৎসায় অসাধারণ দক্ষতা থাকার কারণে তিনি রামপুরের নবাবের চিকিৎসক নিযুক্ত হন। তাকে 'মসিহায়ে হিন্দ' (ভারতের সুস্থকারক) এবং 'মুকুটোবিহীন রাজা' উপাধিতে ভূষিত করা হত। বলা হতো, তিনি রোগীর চেহারা দেখেই রোগ নির্ণয় করতে পারতেন। তিনি দিল্লীতে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান করতেন।
চিকিৎসা ছাড়াও আজমল খাঁ রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। তিনি উর্দু সাপ্তাহিক 'আকমল-উল-আখবার'-এ লেখা লিখতেন। ১৯০৬ সালে শিমলায় ভারতের ভাইসরয়ের সাথে সাক্ষাতকারের জন্য গঠিত মুসলিম প্রতিনিধি দলে নেতৃত্ব দেন। ১৯০৬ সালের ৩০শে ডিসেম্বর ঢাকায় নিখিল ভারত মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠার সময় উপস্থিত ছিলেন। অসহযোগ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন এবং খিলাফত আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। ১৯২১ সালে আহমেদাবাদে অনুষ্ঠিত ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের অধিবেশনে তিনি দলের পঞ্চম মুসলিম সভাপতি নির্বাচিত হন।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ততা:
আজমল খাঁ ইউনানি চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য কাজ করেন। তিনি দিল্লীতে সেন্ট্রাল কলেজ, হিন্দুস্তানি দাওয়াখানা এবং আয়ুর্বেদিক ও ইউনানি তিবিয়া কলেজ প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখেন। এছাড়াও তিনি জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং ১৯২০ সাল থেকে ১৯২৭ সালে মৃত্যু পর্যন্ত এর প্রথম উপাচার্য ছিলেন।
মৃত্যু:
হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ১৯২৭ সালের ২৯শে ডিসেম্বর হাকিম আজমল খাঁ মৃত্যুবরণ করেন।
উত্তরাধিকার:
হাকিম আজমল খাঁ ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে ও ইউনানি চিকিৎসার উন্নয়নে অবদানের জন্য স্মরণীয়। তাঁর নাতি হাকিম মুহাম্মদ নবি খান পাকিস্তানে ‘দাওয়াখানা হাকিম আজমল খাঁ’ নামে একটি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন।