হুগলি

হুগলি: ঐতিহাসিক গৌরব ও আধুনিক রূপ

পশ্চিমবঙ্গের হুগলি, নামটি শুনলেই মনে জেগে ওঠে ঐতিহাসিক এক অতীতের স্মৃতি। ষোড়শ শতক থেকেই পর্তুগিজদের আগমনের সঙ্গে জড়িত হুগলির ইতিহাস রয়েছে সমৃদ্ধ ও বহুমুখী। একসময়ের ছোট্ট গ্রাম হুগলি পর্তুগিজদের হাতে বন্দর নগরীতে পরিণত হয়েছিল, আর সেই বন্দরের গৌরবের ইতিহাস আজও জীবন্ত।

ষোড়শ শতকে পর্তুগিজরা হুগলিতে বসতি স্থাপন করে। ১৫৭৯ সালে ফরমান লাভ করে তারা এখানে উপনিবেশ স্থাপন করে। ১৫৯৯ সালে অগাস্টান গীর্জা নির্মাণের মাধ্যমে হুগলি তাদের উপস্থিতির সাক্ষ্য বহন করে। পোর্টো পিকুয়েনো নামে পরিচিত এই বন্দরটি ভারত, চীন, মালাক্কা ও ম্যানিলা থেকে আগত জাহাজে পূর্ণ থাকতো। এখানে হিন্দুস্থানী, মোঙ্গল, পারস্যদেশীয় ও আর্মেনীয় বণিকরাও ব্যবসায় আসতো। হুগলির সমৃদ্ধি সাতগাঁও-এর সমৃদ্ধির সমান্তরালে অগ্রসর হয়েছিল।

কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতা ও পর্তুগিজদের নৈতিক অধঃপতনের কারণে ১৬৩২ সালের ২০শে জুন মুঘল সম্রাট শাহজাহানের নির্দেশে কাসিম খান হুগলি অবরোধ করেন এবং ১৫ সেপ্টেম্বর দখল করেন। এই ঘটনায় প্রায় দশ হাজার পর্তুগিজ নিহত হয়।

পর্তুগিজদের বিতাড়িত হওয়ার পর ১৬৫১ সালে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি হুগলিতে তাদের ফ্যাক্টরি স্থাপন করে। তবে মুঘল-ইংরেজ দ্বন্দ্বের কারণে ১৬৭০ সালে তারা হুগলি ছেড়ে চলে যায়। ১৬৯০ সালে কলকাতার উত্থান হুগলির পতনের সূচনা করে। তবে মুর্শিদাবাদের উত্থানের পূর্বে হুগলি শিয়া বসতি ও সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ছিল। ১৭৫৭ সালে ইংরেজরা হুগলিকে আক্রমণ করেছিল।

আজও হুগলিতে ঐতিহাসিক স্মৃতিচিহ্ন রয়েছে। একটি মুসলিম ইমামবাড়া এবং একটি পর্তুগিজ চার্চ সেই স্মৃতির সাক্ষী। ১৮৬৫ সালে হুগলি ও চুঁচুড়া একত্রে একটি পৌরসভা হিসেবে গঠিত হয়। আজ হুগলি পশ্চিমবঙ্গের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প নগরী। হুগলি মোহসীন কলেজ ১৮৩৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। হুগলির ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এর অনন্য পরিচয়।

মূল তথ্যাবলী:

  • ষোড়শ শতকে পর্তুগিজরা হুগলিতে উপনিবেশ স্থাপন করেছিল।
  • ১৬৩২ সালে মুঘলরা হুগলি দখল করে।
  • ১৬৫১ সালে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি হুগলিতে ফ্যাক্টরি স্থাপন করে।
  • ১৮৬৫ সালে হুগলি ও চুঁচুড়া একত্রে পৌরসভা হয়।
  • হুগলি মোহসীন কলেজ ১৮৩৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।