হাসান হাফিজ: বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট কবি ও সাংবাদিক
হাসান হাফিজ বাংলাদেশের একজন অন্যতম প্রধান কবি ও প্রবীণ সাংবাদিক। তিনি ১৯৫৫ সালের ১৫ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার এলাহীনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। জন্মসূত্রে তার নাম ছিল গোলাম মওলা শাহজাদা। পরবর্তীতে লেখক নাম হিসেবে তিনি হাসান হাফিজ নামটি গ্রহণ করেন। হােসেনপুর হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক পাশ করে তিনি ঢাকা কলেজে ভর্তি হন এবং পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য এবং গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে দুইটি এম.এ ডিগ্রি অর্জন করেন।
তার স্ত্রীর নাম শাহীন আখতার, যিনি ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের প্রাক্তন সহকারী অধ্যাপক। তাদের একমাত্র সন্তান ডা. শিহান তাওসিফ গৌরব।
সাহিত্য চর্চার পাশাপাশি হাসান হাফিজ সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন। প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় ৪৯ বছরের অধিক সময় ধরে কর্মরত তিনি দৈনিক বাংলা, দৈনিক জনকণ্ঠ, কলকাতার সাপ্তাহিক দেশ (বর্তমানে পাক্ষিক), বৈশাখী টেলিভিশন, আমার দেশ এবং বর্তমানে দৈনিক কালের কণ্ঠ-এর মতো বিখ্যাত সংবাদমাধ্যমে সাংবাদিক ও সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০২৪ সালের ২৭ আগস্ট থেকে তিনি দৈনিক কালের কণ্ঠের সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ১১ আগস্ট ২০২৪ সালে বাংলাদেশ জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নির্বাচিত হন।
শিশুসাহিত্যেও তার অবদান অপরিসীম। তার প্রথম ছড়া ছাপা হয় ইত্তেফাকের কচি কাঁচার আসরে। ১৯৮২ সালে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'এখন যৌবন যার' প্রকাশিত হয়। এ পর্যন্ত তার প্রায় ২০০টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে, যার মধ্যে কাব্যগ্রন্থ, ছড়া, গল্প, রূপকথা, এবং সাক্ষাৎকার রয়েছে। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলির মধ্যে রয়েছে: 'অবাধ্য অর্জুন', 'অপমানে বেজে উঠি', 'জলরেখায় শব্দজোড়', 'হয়তো কিছু হবে', 'ছড়াসমগ্র', 'রূপকথা সমগ্র', 'বিদেশিনী বধূ', 'রবীন্দ্রনাথ: দেশে ভাষণ', 'টাকডুম টাকডুম বাজে' ইত্যাদি।
সাহিত্য ও সাংবাদিকতায় অবদানের জন্য তিনি অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে অগ্রণী ব্যাঙ্ক শিশুসাহিত্য পুরস্কার, জাতীয় প্রেস ক্লাব লেখক সম্মাননা, ডাকসু সাহিত্য পুরস্কার, শ্রীজ্ঞান অতীশ দীপঙ্কর স্বর্ণপদক, কলকাতার সৌহার্দ্য কবিতা উৎসব সম্মাননা ইত্যাদি। তিনি প্রায় ১৫টি দেশ ভ্রমণ করেছেন। ১৯৭৪ সালে তিনি 'চাঁদের হাট' নামক শিশু-কিশোর প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন।
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে হাসান হাফিজ বাংলাদেশ জাতীয় প্রেস ক্লাব এবং বাংলাদেশ পরিবেশ সাংবাদিক ফোরাম (এফইজেবি) এর সাথেও জড়িত ছিলেন। তিনি দেশের বিভিন্ন সামাজিক ও পেশাগত সংগঠনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। তার জীবন ও কর্মযজ্ঞ বাংলাদেশের সাহিত্য ও সাংবাদিকতা জগতে একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।