হাওড়া: পশ্চিমবঙ্গের একটি ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ শহর
হাওড়া, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের হাওড়া জেলার সদর শহর, হুগলি নদীর পশ্চিম তীরে অবস্থিত। কলকাতার যমজ শহর হিসেবে পরিচিত হাওড়া কলকাতা ও আসানসোলের পর রাজ্যের তৃতীয় জনবহুল পৌরসভা। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবহন কেন্দ্র ও কলকাতার প্রবেশদ্বার। ৯০০ বছরেরও বেশি পুরোনো এই শহরের ইতিহাস ঐতিহাসিক ভুরশুট রাজ্যের সাথে জড়িত। ভেনিসের পর্যটক সিজার ফেদারিকি ১৫৭৮ সালে 'Buttor' নামক এলাকার উল্লেখ করেছিলেন, যা বর্তমান হাওড়ার বেতড় অঞ্চল হতে পারে। ১৭১৩ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি হাওড়ার ৫টি গ্রামে (সালকিয়া, হাওড়া, কাসুন্দিয়া, রামকৃষ্ণপুর ও বেতড়) বসতি স্থাপনের অনুমতি পায়। পলাশীর যুদ্ধের পর ১৭৬০ সালে কোম্পানি হাওড়া জেলার পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ লাভ করে।
১৮৫৪ সালে হাওড়া রেল টার্মিনাসের স্থাপনার পর হাওড়া গুরুত্বপূর্ণ শিল্পকেন্দ্রে পরিণত হয়। ১৮৫৫ সালে গমকল ও পাঠকল স্থাপিত হয় এবং ১৮৭০-এর দশকে আরও কয়েকটি কারখানা গড়ে ওঠে। ১৮৮৩ সালে হাওড়া-শালিমার রেল সেকশন তৈরি হয়। ১৯১৪ সালে লিলুয়ায় রেলওয়ে কর্মশালা চালু হয় এবং হালকা ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পের বিকাশ ঘটে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত কারখানার সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে, যার ফলে হাওড়ায় অপরিকল্পিত নগরায়ণ ঘটে।
২০১১ সালের জনগণনানুসারে হাওড়ার জনসংখ্যা ১,৩৭০,৪৪৮, সাক্ষরতার হার ৭৭%। হাওড়ার অবস্থান ২২°৩৪′২৫″ উত্তর ৮৮°১৯′৩০″ পূর্ব অক্ষাংশে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর গড় উচ্চতা ১২ মিটার। হাওড়া ব্রিজ, হাওড়া রেল স্টেশন, শালিমার রেল স্টেশন, কলকাতা মেট্রো রেলের হাওড়া লাইন হাওড়ার গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। ২০২৪ সালের ৬ মার্চ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি হাওড়া ময়দান থেকে হুগলি নদীর নিচ দিয়ে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো রেল চালুর উদ্বোধন করেন। হাওড়া শুধুমাত্র একটি পরিবহন কেন্দ্র নয়, এটি একটি শিল্পকেন্দ্র হিসেবেও বিখ্যাত। এখানে হালকা প্রকৌশল শিল্পের বিকাশ ঘটেছে। বার্ন স্ট্যান্ডার্ড কোম্পানি, রামকৃষ্ণ ফোর্জিংস, শালিমার পেইন্টস এখানে উল্লেখযোগ্য কারখানা। তবে অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে ট্রাফিক জ্যাম, জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও দূষণ হাওড়ার প্রধান সমস্যা।