হবিগঞ্জের বানিয়াচং: এশিয়ার বৃহত্তম গ্রামের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য
বাংলাদেশের হবিগঞ্জ জেলার অন্তর্গত বানিয়াচং উপজেলা, এশিয়ার সর্ববৃহৎ গ্রাম হিসেবে পরিচিত। একই সাথে এটি একটি প্রশাসনিক এলাকাও। এই উপজেলার অবস্থান ২৪°৩২′৩০″ উত্তর ৯১°২০′০০″ পূর্ব। আয়তন ৪৮২.৪৬ বর্গ কিলোমিটার। উত্তরে সুনামগঞ্জের শাল্লা, দিরাই ও আজমিরীগঞ্জ, দক্ষিণে হবিগঞ্জ সদর ও লাখাই, পূর্বে হবিগঞ্জ সদর ও নবীগঞ্জ এবং পশ্চিমে আজমিরীগঞ্জ, কিশোরগঞ্জের মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম উপজেলা অবস্থিত।
নামকরণের ইতিহাস: বানিয়াচং নামকরণের বেশ কিছু মতবাদ প্রচলিত আছে। জনশ্রুতি অনুযায়ী, পুটিয়াবিল নামে এক বিশাল বিলে বানিয়া নামে এক শিকারী চাঙ বানিয়ে পাখি শিকার করত। বিলেটী ভরাট হয়ে গেলে বৃক্ষলতায় ঘেরা এলাকায় পরিণত হয়। 'বানিয়া' ও 'চাঙ' শব্দ থেকে 'বানিয়াচং' নামের উৎপত্তি বলে অনেকে মনে করেন।
ঐতিহাসিক পটভূমি: ব্রিটিশ আমলে সিলেট জেলার অন্তর্গত ছিল বানিয়াচং। ১৮৭৮ সালে হবিগঞ্জ মহকুমা গঠিত হলে ১৯৩৪ সালের ২৩ আগস্ট ২৮৬৭ জি.জে. বিজ্ঞপ্তি মোতাবেক বানিয়াচং থানা গঠিত হয়। ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলে থানা প্রাঙ্গণ সরকারি অনুষ্ঠানের কেন্দ্রস্থল ছিল। ১৯৬০ সালে এটি ‘ভিলেজ এইড’ প্রোগ্রামের অন্তর্ভুক্ত হয়। পরে থানা সার্কেল অফিসারের দপ্তরে পরিণত হয় এবং কুমিল্লা সমবায় মডেলের বাস্তবায়নের কর্মসূচী হিসেবে থানা ট্রেনিং এন্ড ডেভেলপমেন্ট কমপ্লেক্স (টি.টি.ডি.সি.) স্থাপন করা হয়। পরবর্তীতে এটি উপজেলা সদরে রূপান্তরিত হয়। ১৯৮২ সালের ১৫ই তারিখে বানিয়াচং থানাকে উপজেলায় উন্নীত করা হয়।
মুক্তিযুদ্ধের ভূমিকা: বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠনে হবিগঞ্জের নেতৃবৃন্দ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এডভোকেট মোস্তফা আলী, কমান্ড্যান্ট মানিক চৌধুরী, লেঃ কর্ণেল (অব.) এম.এ. রব, গোপাল কৃষ্ণ মহারত্ন, এনামুল হক মোস্তফা শহীদ প্রমুখের সমন্বয়ে গঠিত হয় সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ।
ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য: বানিয়াচং উপজেলা হাওর এলাকায় অবস্থিত। ১৫ টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। ২৩৭টি মৌজা ও ৩৫৯টি গ্রাম রয়েছে। হাওর দ্বারা বেষ্টিত এ উপজেলায় চওড়া ও মাওড়া দুটি কথ্য রূপ রয়েছে।
অর্থনীতি: একটি কৃষিপ্রধান এলাকা হওয়ায় ধান, গম, কচু প্রধান ফসল। ৯০% জনসংখ্যা কৃষিকাজের উপর নির্ভরশীল। অন্যরা প্রবাসী।
সংস্কৃতি: কৃষি নির্ভর উৎসব, যেমন নবান্ন, পহেলা বৈশাখ, রথমেলা ইত্যাদি। গ্রামীণ খেলাধুলার প্রচলন বেশি।
শিক্ষা: ১টি সরকারি কলেজসহ মোট ৩টি কলেজ, ১টি সরকারি বালক ও ১টি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় সহ ২২টি উচ্চ বিদ্যালয় রয়েছে।
জনসংখ্যা: বানিয়াচং উপজেলার মোট জনসংখ্যা ৩,৩৪,৬০৫ জন (২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী), এর মধ্যে পুরুষ ১,৬৮,০১৯ জন এবং মহিলা ১,৬৬,৫৮৬ জন। জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ৬৯৪ জন।
উল্লেখযোগ্য স্থান: বানিয়াচং রাজবাড়ি, সাগরদিঘি, লক্ষ্মী বাওর জলাবন (খড়তির জঙ্গল), বিথঙ্গল আখড়া, মাকালকান্দি গণহত্যা স্মৃতিসৌধ, নাগুরা ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট।
পর্যটন: ঐতিহাসিক স্থান, হাওর, জলাবন, বিভিন্ন উৎসব বানিয়াচংকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে পারে।
উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিবর্গ: মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী নেতৃবৃন্দ, প্রখ্যাত ক্রীড়াবিদ বি রায় চৌধুরী, এসকে চৌধুরী প্রমুখ।
অতিরিক্ত তথ্য: বানিয়াচং সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানার জন্য আমরা আপনাকে নিয়মিতভাবে আপডেট করব।