স্যাটেলাইট

আপডেট: ১ জানুয়ারী ২০২৫, ৩:২৭ এএম

কৃত্রিম উপগ্রহ: মহাকাশের অদম্য সৈনিক

মানব সভ্যতার অগ্রযাত্রায় কৃত্রিম উপগ্রহ বা স্যাটেলাইটের অবদান অপরিসীম। যোগাযোগ, আবহাওয়া পূর্বাভাস, ন্যাভিগেশন, গবেষণা—এই সকল ক্ষেত্রেই উপগ্রহ আমাদের জীবনকে স্পর্শ করেছে। কিন্তু এই উপগ্রহ কি, কত প্রকার ও কীভাবে কাজ করে, তা জানাটাও সমান গুরুত্বপূর্ণ।

উপগ্রহের সংজ্ঞা:

কোনো একটি গ্রহ বা নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে যে কোনো বস্তুর প্রদক্ষিণকে উপগ্রহ বলা হয়। চাঁদ হল পৃথিবীর একমাত্র প্রাকৃতিক উপগ্রহ। কিন্তু, মানুষের তৈরি কৃত্রিম উপগ্রহগুলোই বর্তমানে এই শব্দ দ্বারা বেশি বোঝা যায়। ১৯৫৭ সালের ৪ অক্টোবর সোভিয়েত ইউনিয়নের স্পুটনিক-১ এর উৎক্ষেপণের মধ্যদিয়ে শুরু হয় মহাকাশে কৃত্রিম উপগ্রহের যুগ। তখন থেকে আজ পর্যন্ত হাজার হাজার উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করা হয়েছে।

উপগ্রহের প্রকারভেদ:

উপগ্রহের ব্যবহার অনুযায়ী তাদের বিভিন্ন শ্রেণীতে ভাগ করা যায়:

  • যোগাযোগ উপগ্রহ: টেলিভিশন, টেলিফোন, ইন্টারনেট, এবং অন্যান্য যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য ব্যবহৃত হয়। বঙ্গবন্ধু-১ বাংলাদেশের একটি উল্লেখযোগ্য যোগাযোগ উপগ্রহ।
  • পৃথিবী পর্যবেক্ষণ উপগ্রহ: পৃথিবীর বিভিন্ন দিক পর্যবেক্ষণ করার জন্য ব্যবহৃত হয়, যেমন আবহাওয়া, বন, সমুদ্র, ইত্যাদি।
  • আবহাওয়া উপগ্রহ: আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়।
  • ন্যাভিগেশন উপগ্রহ: জিপিএস (GPS) সিস্টেমের মতো ন্যাভিগেশন সিস্টেমে ব্যবহৃত হয়।
  • বৈজ্ঞানিক গবেষণা উপগ্রহ: মহাকাশ ও পৃথিবী সম্পর্কে নানা গবেষণার জন্য ব্যবহৃত হয়, যেমন মহাকাশ টেলিস্কোপ।
  • সামরিক উপগ্রহ: সামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়, যেমন গুপ্তচরবৃত্তি।

উপগ্রহের কার্যপদ্ধতি:

উপগ্রহগুলো পৃথিবীর কক্ষপথে নির্দিষ্ট বেগে ঘোরে, যার কারণে তারা পৃথিবীর অভিকর্ষ বলের প্রভাব থেকে মুক্ত থাকে। পৃথিবীতে থাকা গ্রাউন্ড স্টেশনগুলো থেকে রেডিও সংকেতের মাধ্যমে উপগ্রহকে নিয়ন্ত্রণ করা ও তথ্য আদান-প্রদান করা হয়।

কক্ষপথের ধরন:

উপগ্রহ বিভিন্ন ধরনের কক্ষপথে স্থাপন করা হয়, যেমন:

  • নিম্ন পৃথিবী কক্ষপথ (LEO): পৃথিবীর পৃষ্ঠ থেকে কাছাকাছি।
  • মধ্যম পৃথিবী কক্ষপথ (MEO): LEO এবং GEO-এর মাঝামাঝি।
  • ভূ-স্থির কক্ষপথ (GEO): পৃথিবীর সাথে সমতালে ঘোরে, তাই পৃথিবী থেকে স্থির মনে হয়।

উপগ্রহের গঠন:

একটি উপগ্রহে থাকে বিভিন্ন উপাদান, যেমন:

  • অ্যান্টেনা: সংকেত প্রেরণ ও গ্রহণের জন্য।
  • পাওয়ার সোর্স: সাধারণত সোলার প্যানেল।
  • প্রসেসর: উপগ্রহের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণের জন্য।
  • সেন্সর: তথ্য সংগ্রহের জন্য।

উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান:

  • সের্গেই কোরোলেভ: স্পুটনিক-১ প্রকল্পের প্রধান ডিজাইনার।
  • আইজ্যাক নিউটন: উপগ্রহের সম্ভাবনার গাণিতিক অধ্যয়ন।
  • আর্থার সি. ক্লার্ক: যোগাযোগ উপগ্রহের ধারণা।
  • নাসা (NASA): মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ সংস্থা।
  • ইএসএ (ESA): ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা।
  • বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন (BTRC): বঙ্গবন্ধু-১ উপগ্রহের উৎক্ষেপণের সাথে জড়িত।

স্থান:

  • কেনেডি স্পেস সেন্টার, ফ্লোরিডা (বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণ)

তারিখ ও ঘটনা:

  • ১৯৫৭: স্পুটনিক-১ উৎক্ষেপণ।
  • ২০১৮: বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণ।

উপগ্রহের ভবিষ্যৎ:

উপগ্রহ প্রযুক্তি দ্রুত উন্নত হচ্ছে। ভবিষ্যতে আরো উন্নত এবং কার্যকর উপগ্রহ তৈরির আশা করা হচ্ছে, যা আমাদের জীবনে আরও বেশি সুবিধা এনে দেবে। তবে মহাকাশ ধ্বংসাবশেষ এবং স্যাটেলাইটের পরিবেশগত প্রভাব নিয়েও চিন্তাভাবনা করা প্রয়োজন। আশা করি এই লেখাটি আপনাদের স্যাটেলাইট সম্পর্কে ভাল ধারণা দিতে সাহায্য করবে। আরও তথ্য পাওয়া গেলে আপডেট করে দেওয়া হবে।

মূল তথ্যাবলী:

  • ১৯৫৭ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ স্পুটনিক-১ উৎক্ষেপণ করে।
  • বঙ্গবন্ধু-১ বাংলাদেশের প্রথম যোগাযোগ উপগ্রহ।
  • যোগাযোগ, আবহাওয়া পূর্বাভাস, ন্যাভিগেশন, গবেষণা—এই সব ক্ষেত্রে উপগ্রহ ব্যবহৃত হয়।
  • উপগ্রহ বিভিন্ন কক্ষপথে স্থাপন করা হয়: LEO, MEO, GEO।
  • উপগ্রহে থাকে অ্যান্টেনা, পাওয়ার সোর্স, প্রসেসর, এবং সেন্সর।

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।