সোনারগাঁও: ঐতিহাসিক গৌরবের ধারক
বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলা দেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতির এক অমূল্য সম্পদ। ঢাকা থেকে মাত্র ২৭ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত এই উপজেলা মেঘনা, শীতলক্ষ্যা ও ধলেশ্বরী নদীর তীরে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক জনপদ। ২৩°৩৯′৩০″ উত্তর ৯০°৩৬′৩০″ পূর্ব অক্ষাংশে অবস্থিত এ অঞ্চলের উত্তরে রূপগঞ্জ ও আড়াইহাজার, দক্ষিণে মুন্সীগঞ্জের মুন্সীগঞ্জ সদর ও গজারিয়া, পূর্বে কুমিল্লার হোমনা ও মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া, এবং পশ্চিমে নারায়ণগঞ্জ সদর, রূপগঞ্জ ও ডেমরা অবস্থিত।
প্রাচীন কাল থেকেই সোনারগাঁও বাংলার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কেন্দ্র ছিল। ১৩৩৮ খ্রিস্টাব্দে ফখরুদ্দিন মোবারক শাহের আমলে স্বাধীন বাংলার রাজধানী হিসেবে এর গুরুত্ব বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। গিয়াসউদ্দিন আজম শাহ, শের শাহ, এবং ঈশা খাঁ-সহ অনেক মুসলিম শাসক সোনারগাঁ থেকে শাসন করেছেন। শুধু রাজনীতিতে নয়, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, কৃষি, সাহিত্য, সংস্কৃতি, শিল্প ও কারুকার্যে সোনারগাঁ ছিল অতুলনীয়। বিশ্ববিখ্যাত মসলিন কাপড়ের জন্য এটি বিখ্যাত ছিল। কথিত আছে, বাংলার প্রথম মসজিদ সোনারগাঁয়ের গোয়ালদী গ্রামে নির্মিত হয়েছিল। শেরশাহের আমলে পাঞ্জাব পর্যন্ত বিস্তৃত গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোডের নির্মাণ সোনারগাঁ থেকে শুরু হয়েছিল।
সোনারগাঁ নামকরণের ইতিহাস রহস্যময়। কিছু কিংবদন্তী সোনার ভূমি, রক্তবর্ণ মাটি, এবং সোনার খনি এর নামকরণের কারণ হিসেবে উল্লেখ করে। আবার কিছু ইতিহাসবিদ মনে করেন, এখানে স্থাপিত একমাত্র ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের
স্বর্ণের টুকরা
হিসেবে বিবেচনা করা হতো এবং এই কারণেই সোনারগাঁ নামকরণ হয়েছে।
সোনারগাঁয়ের ঐতিহ্য পরিদর্শন করতে গেলে আপনি পানাম নগর, সোনারগাঁও জাদুঘর, সরদারবাড়ি, গোয়ালদী মসজিদ, গিয়াসউদ্দিন আজম শাহর মাজার, পাঁচপীরের দরগাহ, মোগড়াপাড়া শাহসাব বাড়ী এবং অন্যান্য অসংখ্য ঐতিহাসিক স্থাপনা দেখতে পাবেন। ২০১৯ সালে ওয়ার্ল্ড কমিউনিকেটরস কাউন্সিল (ডব্লিউসিসি) সোনারগাঁওকে বিশ্ব কারুশিল্প শহরের মর্যাদা প্রদান করে, যা এই অঞ্চলের ঐতিহ্য ও কারুশিল্পের মান বৃদ্ধি করেছে। ৩,৬৭,৭৬৪ জনসংখ্যার এই উপজেলা মৎস্য চাষ, কৃষিকাজ, কলকারখানা এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে।