সৈয়দ শামসুল হক

আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:২৭ পিএম
নামান্তরে:
Syed Shamsul Haque
Sayid Samsul Haq
হডসনের বন্দুক
সৈয়দ শামসুল হক

সৈয়দ শামসুল হক (২৭ ডিসেম্বর ১৯৩৫ - ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬) বিংশ শতাব্দীর একজন বিশিষ্ট বাংলাদেশী সাহিত্যিক ছিলেন। কবিতা, উপন্যাস, নাটক, ছোটগল্প, অনুবাদ—সাহিত্যের সকল মাধ্যমেই তাঁর অবদান অসামান্য। তাঁর সাবলীল লেখনীর জন্য তাঁকে ‘সব্যসাচী লেখক’ হিসেবেও অভিহিত করা হয়। ৬২ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি সক্রিয়ভাবে সাহিত্যচর্চা করেছেন।

মাত্র ৩১ বছর বয়সে ১৯৬৬ সালে তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত সাহিত্যিকদের মধ্যে তিনিই সর্বকনিষ্ঠ ছিলেন। এছাড়াও বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্য ১৯৮৪ সালে একুশে পদক এবং ২০০০ সালে স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত হন।

সৈয়দ শামসুল হক ১৯৩৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর কুড়িগ্রাম জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা সৈয়দ সিদ্দিক হুসাইন একজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক ছিলেন এবং মাতা হালিমা খাতুন। আট সন্তানের মধ্যে তিনি জ্যেষ্ঠতম ছিলেন।

শিক্ষাজীবনের প্রথম দিকে কুড়িগ্রাম মাইনর স্কুল ও কুড়িগ্রাম হাই ইংলিশ স্কুলে পড়াশোনা করেন। ১৯৫০ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তাঁর পিতার ইচ্ছা ছিল তিনি ডাক্তারি পড়বেন, কিন্তু নিজের ইচ্ছা অনুসারে ১৯৫১ সালে বম্বে চলে যান এবং এক সিনেমা প্রোডাকশন হাউসে কাজ করেন।

১৯৫২ সালে দেশে ফিরে জগন্নাথ কলেজে ভর্তি হন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হলেও স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করার আগেই ১৯৫৬ সালে লেখাপড়া ত্যাগ করেন। ১৯৫৬ সালে তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘দেয়ালের দেশ’ প্রকাশিত হয়।

পিতার মৃত্যুর পর অর্থনৈতিক কারণে চলচ্চিত্রের জন্য চিত্রনাট্য লেখা শুরু করেন। ‘মাটির পাহাড়’ (১৯৫৯), ‘তোমার আমার’, ‘শীত বিকেল’, ‘কাঁচ কাটা হীরে’, ‘ক খ গ ঘ ঙ’, ‘বড় ভাল লোক ছিল’, ‘পুরস্কার’ প্রভৃতি চলচ্চিত্রের কাহিনী, চিত্রনাট্য ও সংলাপ রচনা করেন। ‘বড় ভাল লোক ছিল’ ও ‘পুরস্কার’ চলচ্চিত্রের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকারের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান।

১৯৭১ সালের নভেম্বর মাসে লন্ডনে চলে যান এবং বিবিসি বাংলার সাথে যুক্ত হন। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের খবর তিনিই বিবিসি রেডিওতে পাঠ করেন। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত বিবিসি বাংলার প্রযোজক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

সৈয়দ শামসুল হক প্রথিতযশা লেখিকা ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আনোয়ারা সৈয়দ হককে বিয়ে করেন। তাদের এক ছেলে ও এক মেয়ে।

তাঁর প্রথম লেখা প্রকাশিত হয় ১৯৫১ সালে ‘অগত্যা’ পত্রিকায়। ‘পরানের গহীন ভিতর’, ‘একদা এক রাজ্যে’ (১৯৬১), ‘বৈশাখে রচিত পঙ্ক্তিমালা’ ,‘আমার শহর ঢাকা’, ‘বেজান শহরের জন্য কোরাস’, ‘বৃষ্টি ও জলের কবিতা’, এইসব কাব্যগ্রন্থ তাকে পাঠকমহলে অত্যন্ত জনপ্রিয় করে তোলে।

১৯৫৬ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘দেয়ালের দেশ’। ‘এক মহিলার ছবি’, ‘অনুপম দিন’, ‘সীমানা ছাড়িয়ে’, ‘খেলারাম খেলে যা’ ইত্যাদি উপন্যাস জনপ্রিয়তা লাভ করে।

‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’, ‘নুরুলদীনের সারাজীবন’ ইত্যাদি কাব্যনাটকে সমসাময়িক বাংলাদেশ এবং মধ্যবিত্ত সমাজের আবেগ-অনুভূতি ও ভালো-মন্দ দিকগুলো তিনি তুলে ধরেন।

২০১৬ সালের ১৫ এপ্রিল ফুসফুসের সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে তাকে লন্ডনে নেওয়া হয়। লন্ডনের রয়্যাল মার্সডেন হাসপাতালে তার ফুসফুসে ক্যান্সার ধরা পড়ে। চার মাস চিকিৎসার পর দেশে ফিরিয়ে আনা হয় এবং ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬ সালে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে তিনি মারা যান। তাঁর মরদেহ কুড়িগ্রামে দাফন করা হয়।

মূল তথ্যাবলী:

  • সৈয়দ শামসুল হক ছিলেন একজন বিশিষ্ট বাংলাদেশী সাহিত্যিক।
  • তিনি কবিতা, উপন্যাস, নাটক, ছোটগল্প, অনুবাদ—সকল মাধ্যমেই অসামান্য অবদান রেখেছেন।
  • ৩১ বছর বয়সে বাংলা একাডেমি পুরস্কার, ১৯৮৪ সালে একুশে পদক ও ২০০০ সালে স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত হন।
  • কুড়িগ্রামে জন্মগ্রহণকারী তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন।
  • বিবিসি বাংলায়ও তিনি কাজ করেছেন।
  • ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ২০১৬ সালে মৃত্যুবরণ করেন।

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।

গণমাধ্যমে - সৈয়দ শামসুল হক

১৯৭৬

সৈয়দ শামসুল হকের রচিত ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’ নাটকটি মঞ্চস্থ হয়।