বাংলাদেশে সামাজিক বৈষম্য: এক বাস্তবতা
সামাজিক বৈষম্য বা Social Inequality বলতে সমাজে বসবাসরত মানুষদের মধ্যে সুযোগ-সুবিধাগত বৈপরীত্যকে বুঝায়। অর্থ, লিঙ্গ, বর্ণ, জাতি, ধর্ম, শিক্ষা, অবস্থান, ক্ষমতা, আয় ইত্যাদি নানা কারণে এ বৈষম্য দেখা দেয়। সমাজের মানুষ বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত, যাদের মধ্যে স্বার্থের দ্বন্দ্ব বিরাজমান। এই দ্বন্দ্বই সমাজে বৈষম্যের সূচনা করে। একদল মানুষ সব সুযোগ-সুবিধা একচেটিয়াভাবে ভোগ করে, অন্যদল নূন্যতম মানবিক সুযোগ-সুবিধা থেকেও বঞ্চিত থাকে।
বৈষম্যের প্রকারভেদ:
- অর্থনৈতিক বৈষম্য: সমাজের ধনীরা তাদের প্রভাব খাটিয়ে দরিদ্রদের শোষণ করে। ফলে দরিদ্ররা তাদের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি করতে পারে না।
- ক্ষমতার বৈষম্য: ক্ষমতার অধিকারীরা তাদের ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের উপর দমন-পীড়ন চালায়।
- লিঙ্গ বৈষম্য: লিঙ্গের ভিত্তিতে কাউকে তার ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা এবং তার সম্ভাবনার বিকাশে বাধা সৃষ্টি করা। নারীদের প্রতি বৈষম্য সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা যায়, তবে পুরুষ ও অন্যান্য লিঙ্গের ব্যক্তিরাও বৈষম্যের শিকার হয়।
- বর্ণ বৈষম্য: বর্ণের ভিত্তিতে কাউকে শ্রেষ্ঠতম এবং অন্যকে নিম্নতম ভাবা এবং শ্রেষ্ঠতমের কর্তৃত্ব খাটানো।
- প্রাতিষ্ঠানিক বৈষম্য: সমাজের নীতিনির্ধারক পর্যায়ে বৈষম্যমূলক নীতি গ্রহণের ফলে কোন ব্যক্তি বা সম্প্রদায় ধর্ম, বর্ণ, সংস্কৃতি বা অন্য কোন কারণে সামাজিক প্রতিষ্ঠান থেকে বৈষম্যমূলক আচরণ পায়।
বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে:
বাংলাদেশে সামাজিক বৈষম্যের চিত্র বেশ জটিল। অর্থনৈতিক বৈষম্য, লিঙ্গ বৈষম্য, জাতিগত বৈষম্য, ধর্মীয় বৈষম্য ইত্যাদি বিভিন্ন রূপে এ বৈষম্য দেখা দেয়। গ্রামীণ এলাকায় জমি-জমা সংক্রান্ত বৈষম্য, শহরাঞ্চলে আয়ভিত্তিক বৈষম্য, কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য, শিক্ষা ব্যবস্থায় ধনী-দরিদ্রের মধ্যে বৈষম্য, নৃগোষ্ঠীদের প্রতি বৈষম্য, প্রতিবন্ধীদের প্রতি বৈষম্য ইত্যাদি বিভিন্ন দিক থেকে বৈষম্যের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। হাসপাতাল, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, সরকারি চাকুরী ইত্যাদি খাতেও বৈষম্য স্পষ্টভাবে দেখা যায়।
সমাধানের পন্থা:
সামাজিক বৈষম্য দূর করার জন্য সুশাসন, ন্যায়বিচার, সমতা, মানবাধিকারের প্রতি গুরুত্ব আরো বৃদ্ধি করতে হবে। শিক্ষা, চাকুরী, স্বাস্থ্য সেবায় সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। দারিদ্র্য দূর করার জন্য কাজ করতে হবে। নারীদের ক্ষমতায়ন এবং তাদের অধিকার রক্ষায় কাজ করতে হবে। নৃগোষ্ঠী ও প্রতিবন্ধীদের প্রতি সম্মান ও সহমর্মিতার বৃদ্ধি করতে হবে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং দুর্নীতি দমন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।