বাংলাদেশে সামাজিক বনায়ন: একটি সাফল্যগাথা
বাংলাদেশে সামাজিক বনায়ন একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ যা দেশের দারিদ্র্য বিমোচন, পরিবেশ সংরক্ষণ এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এটি একটি জনসাধারণের অংশগ্রহণমূলক বনায়ন কর্মসূচী যেখানে স্থানীয় জনগোষ্ঠী বন সংরক্ষণ ও উন্নয়নে সক্রিয়ভাবে জড়িত থাকে।
ইতিহাস:
বন বিভাগ ১৯৬০-এর দশকের শুরুতে বন সম্প্রসারণের মাধ্যমে বনায়ন কর্মসূচি শুরু করে। ১৯৮১-৮২ সাল থেকে উত্তরবঙ্গের ৭টি জেলায় 'কমিউনিটি ফরেষ্ট্রী' প্রকল্পের মাধ্যমে সামাজিক বনায়নের প্রচলন শুরু হয়। ২০০০ সালে সরকার সামাজিক বনায়ন কার্যক্রমকে ১৯২৭ সালের বন আইনের আওতায় নিয়ে আসে এবং ২০০৪ সালে সামাজিক বনায়ন বিধিমালা প্রবর্তন করে। ২০১১ সাল পর্যন্ত বিধিমালায় সংশোধনী আনা হয়, যার ফলে সরকারি বনভূমিতে বনায়নে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর বিনিয়োগের সুযোগ বৃদ্ধি পায়।
উদ্দেশ্য:
সামাজিক বনায়নের প্রধান লক্ষ্য হলো দারিদ্র্য বিমোচন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, পরিবেশ সংরক্ষণ এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন। এর মাধ্যমে দরিদ্র মানুষ খাদ্য, জ্বালানি, আসবাবপত্র এবং মূলধনের চাহিদা পূরণ করতে পারে। নারী ক্ষমতায়ন ও নেতৃত্ব সৃষ্টিতেও সামাজিক বনায়ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
কার্যক্রম:
সামাজিক বনায়নের আওতায় নার্সারি স্থাপন, পতিত ভূমিতে বৃক্ষরোপণ, বনজ সম্পদ ব্যবস্থাপনা, মরুময়তা রোধ, ক্ষয়িষ্ণু বনাঞ্চল সংরক্ষণ, পরিবেশ উন্নয়ন, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ইত্যাদি কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত।
অর্থনৈতিক প্রভাব:
সামাজিক বনায়ন কার্যক্রমের ফলে বিপুল পরিমাণ লভ্যাংশ বিতরণ করা হয়েছে, যা দরিদ্র মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়ক হয়েছে। গাছ বিক্রয়ের মাধ্যমেও বিপুল অর্থ উপার্জন করা হয়েছে। এছাড়াও, লক্ষ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।