সাভার: ঢাকার নিকটবর্তী একটি ঐতিহাসিক শহর
বাংলাদেশের ঢাকা জেলার সাভার, ঢাকা মহানগরীর উত্তর-পশ্চিমে মাত্র ২৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর। বংশী ও ধলেশ্বরী নদীর সঙ্গমস্থলে অবস্থিত এই শহরটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব অপরিসীম। ১৩.৫৪ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই শহরে প্রায় ২৯৬,৮৫১ জন মানুষ বাস করে, যা একে বাংলাদেশের ১১তম বৃহৎ শহরে পরিণত করেছে।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব:
সাভারের ইতিহাস প্রাচীনকালে বিস্তৃত। কিংবদন্তী অনুসারে, রাজা হরিশচন্দ্র রাঢ় থেকে সাভারে এসে বংশী নদীর তীরে রাজধানী প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এখানে পাওয়া গেছে দুটি শিলালিপি, যার একটিতে হরিশচন্দ্র পাল নামের এক রাজার উল্লেখ আছে। আরও প্রত্নতাত্ত্বিক খনন কাজে গুপ্তোত্তর যুগের ৬টি স্বর্ণ মুদ্রা, মৃৎপাত্র, ইট নির্মিত স্তূপ, ব্রোঞ্জের মূর্তি, লৌহ নির্মিত বর্শা ফলক, পোড়ামাটির ফলক প্রভৃতি প্রত্নবস্ত্ত আবিষ্কৃত হয়েছে। সাভারে মোট ১৩টি প্রত্নস্থল থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে, যেমন: রাজা হরিশচন্দ্রের বাড়ি, রাজাসন, কোটবাড়ি, গন্ডারিয়া, কর্ণপাড়া, কলমা ইত্যাদি। এই সকল প্রত্নস্থল সাত-আট শতকের সভ্যতার সাক্ষ্য বহন করে।
ভৌগোলিক অবস্থান ও জনসংখ্যা:
সাভার মধুপুর প্লাইস্টোসিন উঁচু ভূমির দক্ষিণাংশে অবস্থিত। উঁচু স্তরের ভূমি ‘চালা’ এবং দুই উঁচু ভূমির মাঝের নিচু অংশ ‘বাইদ’ নামে পরিচিত। ২০০১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী সাভারের জনসংখ্যা ছিল ২৯৬,৮৫১ জন, যার মধ্যে ১৩২,৬৯৮ জন পুরুষ এবং ১২৪,০৬২ জন মহিলা। জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ১১,৩০৬ জন।
প্রশাসনিক গঠন:
১৯৫৯ সালে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনের পর সাভার থানা কাউন্সিল গঠিত হয় এবং ১৯৯১ সালে সাভার পৌরসভা গঠিত হয়।
উল্লেখযোগ্য বিষয়:
সাভার একটি গুরুত্বপূর্ণ বণিজ্য কেন্দ্র এবং এখানে বিভিন্ন প্রকার কারখানা ও উদ্যোগ আছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান এই শহরটিকে আরও গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে। তবে সাম্প্রতিক কয়েক বছরে দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং শিল্পায়নের কারণে সাভারে বিভিন্ন সামাজিক এবং পরিবেশগত সমস্যা উদ্ভব হচ্ছে।