সাতঘরিয়া: বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলার ইতিহাসের সাথে জড়িত একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম। বর্তমানে সাতক্ষীরা নামে পরিচিত জেলাটির প্রাচীন নাম ছিল সাতঘরিয়া। এই নামকরণের পেছনে বেশ কিছু মতবাদ প্রচলিত আছে। প্রধান মতবাদটি হলো, ১৮শ শতকের শেষভাগে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সময় নদীয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের এক কর্মচারী বিষ্ণুরাম চক্রবর্তী নিলামে বুড়ন পরগণা ক্রয় করেন এবং তার অন্তর্গত সাতঘরিয়া নামক গ্রামে বসতি স্থাপন করেন। তার পুত্র প্রাণনাথ চক্রবর্তী সাতঘরিয়া অঞ্চলে ব্যাপক উন্নয়ন কাজ করে এই এলাকাটিকে আরও সমৃদ্ধ করে তোলেন। ১৮৬১ সালে সাতক্ষীরা মহকুমা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ইংরেজ শাসকরা তাদের পরিচিত সাতঘরিয়াতেই প্রধান কার্যালয় স্থাপন করেন। ক্রমশঃ সাতঘরিয়া নামটি ইংরেজদের কাছে ‘সাতক্ষীরা’ রূপে পরিণত হয়।
অন্যান্য মতবাদ অনুযায়ী, সাতটি দীঘি, সাতটি গ্রামের সমন্বয়ে গঠিত এক বৃহৎ জনপদ, অথবা সাতটি বিখ্যাত পণ্য (ওল, ঘোল, কুল, সন্দেশ, মাছ, আম ও গাছের চারা) এর নামানুসারে সাতক্ষীরার নামকরণ হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
সাতঘরিয়া, অর্থাৎ বর্তমান সাতক্ষীরা, একটি প্রাচীন জনপদ, যার ইতিহাস প্রাচীন ভারতের রামায়ণ ও মহাভারতের যুগ পর্যন্ত বিস্তৃত। এই অঞ্চলটি একসময় বুড়ন দ্বীপ নামে পরিচিত ছিল। পাল, সেন, বর্মণ, এবং অন্যান্য রাজবংশের শাসনামলে সাতঘরিয়া অঞ্চলের ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক গুরুত্ব ছিল। বারো ভুঁইয়াদের শাসনামল, মুঘলদের আগমন এবং ব্রিটিশ শাসন আমলেও এই অঞ্চলের ইতিহাস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ভৌগোলিক দিক থেকে, সাতঘরিয়া অঞ্চলটি বঙ্গোপসাগরের তীরে অবস্থিত, যেখানে বৃহৎ বনভূমি সুন্দরবন অবস্থিত। কৃষিকাজ, মৎস্য চাষ, ও চামড়া শিল্প এই অঞ্চলের অর্থনীতির মূল ভিত্তি। সাতক্ষীরা জেলা তার চিংড়ি চাষ এবং আমের জন্যও বিখ্যাত।
সংক্ষেপে, সাতঘরিয়া নামটি সাতক্ষীরা জেলার ঐতিহাসিক পরিচয় বহন করে। জেলার নামকরণ, ইতিহাস, ভৌগোলিক অবস্থান এবং অর্থনীতির বিভিন্ন দিক সাতঘরিয়া নামটির সাথে জড়িত। তবে, সাতঘরিয়া সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য উপলব্ধ হলে, আমরা এই লেখাটি আরও সম্পূর্ণরূপে আপডেট করব।