বাংলাদেশে আইনি সহায়তা : একটি বিশদ বিশ্লেষণ
আইনি সহায়তা বা লিগ্যাল এইড হলো আর্থিকভাবে অসচ্ছল ব্যক্তিদের আদালতে তাদের মামলা পরিচালনার জন্য সরকার কর্তৃক প্রদত্ত সহায়তা। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অধিকার যা সকল নাগরিকের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য। ১৯৯৪ সালের ১৮ জানুয়ারি প্রথমবারের মতো দরিদ্র মোকদ্দমাকারীদের আইনি সহায়তা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর মাধ্যমে প্রতিটি জেলায় জেলা ও দায়রা জজকে চেয়ারম্যান করে একটি আইনি সহায়তা কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটি দরিদ্র ব্যক্তিদের আবেদন পরীক্ষা করে আইনি সহায়তা প্রদান করে।
১৯৯৭ সালের ১৯ মার্চ একটি জাতীয় লিগ্যাল এইড কমিটি গঠন করা হয় এবং জেলা কমিটিগুলো পুনর্গঠিত হয়। জাতীয় কমিটি জেলা কমিটিগুলোর কার্যকলাপ তত্ত্বাবধান করে। আইনি সহায়তা কার্যক্রম সুসংহত করার জন্য ২০০০ সালে লিগ্যাল এইড অ্যাক্ট প্রণয়ন করা হয়। এই আইনে একটি জাতীয় আইনি সহায়তা প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ গঠনের ব্যবস্থা রাখা হয়। এই কর্তৃপক্ষের নীতিমালা প্রণয়ন, জেলা কমিটির কার্যকলাপ তত্ত্বাবধান এবং আপিলের শুনানি গ্রহণের দায়িত্ব জাতীয় ব্যবস্থাপনা বোর্ডের উপর ন্যস্ত থাকে।
আইনি সহায়তা কার্যক্রমের আওতায় জাতীয় ও জেলা কমিটি আইনজীবীদের সমন্বয়ে প্যানেল গঠন করে। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের জন্য ন্যূনতম সাত বছর এবং জেলা আদালতের আইনজীবীদের জন্য ন্যূনতম পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতার প্রয়োজন। এই প্যানেলের আইনজীবীরা দরিদ্র ও অসচ্ছল মোকদ্দমাকারীদের পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন।
২০০৬ সালের একটি সংবাদ প্রতিবেদন (প্রথম আলো) অনুযায়ী, ১৯৯৪ সাল থেকে ২২,০০০ ব্যক্তিকে ফৌজদারি এবং ৮,০০০ ব্যক্তিকে দেওয়ানি মামলায় আইনি সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। দরিদ্র নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। সুপ্রিম কোর্টে ৫০০টির বেশি মামলায় আইনি সহায়তা দেওয়া হয়েছে। ২০০১ সালের আইনি সহায়তা বিধিমালা অনুসারে বিভিন্ন শ্রেণীর দরিদ্র ও অসচ্ছল ব্যক্তি আইনি সহায়তা পেতে পারেন। যেমন: মুক্তিযোদ্ধা, বৃদ্ধ ভাতা গ্রহীতা, ভিজিডি কার্ডধারী, অবৈধ পাচারের শিকার, এসিড নিক্ষেপের শিকার, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, দরিদ্র বিধবা ইত্যাদি।
আইনি সহায়তা বাংলাদেশের দরিদ্র ও অসচ্ছল মানুষের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ। এই কার্যক্রমের আরও সুসংহত ও কার্যকর বাস্তবায়ন দরকার, যাতে সকলেই ন্যায়বিচার পেতে পারে।