তৃণমূল কংগ্রেস: পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে এক অভূতপূর্ব অধ্যায়
১৯৯৮ সালের ১লা জানুয়ারি, পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক দৃশ্যপটে এক নতুন দলের আবির্ভাব ঘটে – তৃণমূল কংগ্রেস। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে এই দলের যাত্রা শুরু হয়। এর পূর্বনাম ছিল পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল কংগ্রেস। ১৯৯৩ সালের ২১শে জুলাই, বামফ্রন্ট সরকারের আমলে, সচিত্র ভোটার কার্ডের দাবিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে করা মহাকরণ অভিযানে পুলিশি গুলিতে ১৩ জনের মৃত্যু এই দলের গঠনের অন্যতম কারণ। এই ১৩ জন শহীদ (বন্দন দাস, মুরারী চক্রবর্তী, রতন মন্ডল, বিশ্বনাথ রায়, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, অসীম দাস, কেশব বৈরাগী, শ্রীকান্ত শর্মা, দিলীপ দাস, রঞ্জিত দাস, প্রদীপ রায়, মহম্মদ খালেক, ইনু মিঞা) তৃণমূল কংগ্রেসের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস।
তৃণমূল কংগ্রেসের প্রথম দিকের রাজনৈতিক যাত্রা ছিল বেশ চ্যালেঞ্জিং। তবে ধীরে ধীরে দলটি জনসমর্থন অর্জন করে। ১৯৯৮ সালে লোকসভা নির্বাচনে ৭টি আসন জয় করে দলটি, ১৯৯৯ সালে ৮টি এবং ২০০১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে জাতীয় কংগ্রেসের সাথে জোট বেঁধে ৬০টি আসনে জয়লাভ করে। ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচন তৃণমূল কংগ্রেসের জন্য এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। ৩৪ বছরের বামফ্রন্ট শাসনের অবসান ঘটিয়ে তারা ২২৭ টি আসন (এককভাবে ১৮৪ টি) জিতে সরকার গঠন করে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হন। 'মা-মাটি-মানুষ' স্লোগান তখন জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ২০১৬ এবং ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনেও তৃণমূল কংগ্রেস বিজয়ী হয়।
২০১৪ সালে, ভারতের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস ৩৪টি আসন জয় করে এবং জাতীয় দলের মর্যাদা লাভ করে। তবে ২০২৩ সালে তারা এই মর্যাদা হারিয়ে স্বীকৃত রাজ্য দল হিসাবে অবস্থান করে। জাগো বাংলা তৃণমূল কংগ্রেসের বাংলা মুখপত্র। আন্দোলন, জনসেবা, ও সামাজিক উন্নয়নে তৃণমূল কংগ্রেসের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। 'জয় হিন্দ বাহিনী' ও 'বঙ্গধ্বনী বাহিনী' তাদের উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ।
তৃণমূল কংগ্রেস পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে এবং ভারতের রাজনীতিতেও এর প্রভাব বিস্তৃত।