সিলেট শাহী ঈদগাহ মাঠ: ঐতিহাসিক গৌরব ও স্থাপত্যের এক অপূর্ব সমন্বয়
সিলেট শহরের উত্তর সীমান্তে অবস্থিত শাহী ঈদগাহ মাঠ বাংলাদেশের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক নিদর্শন হিসেবে পরিচিত। ১৭০০ সালের প্রথম দশকে তৎকালীন সিলেটের ফৌজদার ফরহাদ খাঁর উদ্যোগে নির্মিত এই ঈদগাহ মাঠটি শুধুমাত্র ঈদের নামাজের স্থান নয়, বরং বহু ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী। এই ঈদগাহ মাঠের স্থাপত্য শৈলীতে মুঘল যুগের প্রভাব স্পষ্ট।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব:
- ১৭৭২ সালে সৈয়দ হাদী ও মাদী কর্তৃক পরিচালিত ইংরেজ বিরোধী ভারত-বাংলা জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সূচনা এই মাঠেই হয়েছিল।
- ১৭৮২ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিরুদ্ধে মুহররমের হাঙ্গামা সংঘটিত হয় এই ঈদগাহ মাঠে, যা ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথম ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন হিসেবে পরিচিত।
- মহাত্মা গান্ধী, কায়েদে আজম মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ, মাওলানা মোহাম্মদ আলী জওহর, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এবং শেরে বাংলা আবুল কাশেম ফজলুল হক-এর মতো বরেণ্য নেতারা এই মাঠে বক্তৃতা দিয়েছেন।
স্থাপত্য:
শাহী ঈদগাহ মাঠ উঁচু একটি টিলার উপর অবস্থিত। মূল ভূমি থেকে কারুকার্য খচিত ২২টি বৃহৎ সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠতে হয়। উপরে উঠলে দেখা যায় ১৫টি গম্বুজ সজ্জিত ঈদগাহ মাঠ। এছাড়াও, চারদিকে ছোট-বড় ১০ টি গেট, এবং মুসল্লীদের অজুর জন্য বিশাল পুকুর রয়েছে। ঈদগাহ মাঠের উত্তরে শাহী ঈদগাহ মসজিদ, পাশে বন কর্মকর্তার বাংলো, দক্ষিণে বাংলাদেশ টেলিভিশনের সিলেট কেন্দ্র, এবং পূর্বে শাহ মিরারজীর মাজারের পাশে সিলেট আবহাওয়া অফিস অবস্থিত।
অবস্থান ও যোগাযোগ:
সিলেট শহরের কেন্দ্র থেকে প্রায় ২ কি.মি. দূরে, ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ৭ কি.মি. এবং সিলেট রেলওয়ে স্টেশন থেকে ৫ কি.মি. দূরে শাহী ঈদগাহ মাঠ অবস্থিত।
উপসংহার:
সিলেট শাহী ঈদগাহ মাঠ বাংলাদেশের ঐতিহাসিক ও স্থাপত্যের এক অপূর্ব সমন্বয়। এটি শুধুমাত্র ধর্মীয় স্থান নয়, বরং দেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই মাঠটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে দেশের ঐতিহ্য ধারণ করে রাখার জন্য সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।