শহীদুল্লাহ কায়সার: একজন সাহসী সাংবাদিক ও লেখক
শহীদুল্লাহ কায়সার (১৬ ফেব্রুয়ারি ১৯২৭ - ১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১) ছিলেন একজন বিশিষ্ট বাংলাদেশী সাংবাদিক, লেখক ও বুদ্ধিজীবী। তার প্রকৃত নাম ছিল আবু নঈম মোহাম্মদ শহীদুল্লা। ফেনী জেলার সোনাগাজি উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের মাজুপুর গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে অর্থনীতিতে অনার্সসহ বিএ ডিগ্রি লাভ করেন এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমএ শুরু করলেও শেষ করতে পারেননি। তার পিতার নাম মাওলানা মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ এবং মাতার নাম সৈয়দা সুফিয়া খাতুন।
শহীদুল্লাহ কায়সার ছাত্রজীবন থেকেই রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। ১৯৪৭ সালে পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগদানের মাধ্যমে তিনি রাজনীতিতে প্রবেশ করেন এবং ১৯৫১ সালে পার্টির সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি দেশপ্রেমিক ও বিশ্বকর্মা ছদ্মনামে রাজনৈতিক ও সাংবাদিক লেখালিখি করতেন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণের জন্য তিনি গ্রেফতার হন এবং সাড়ে তিন বছর কারাবাস ভোগ করেন। পরেও তিনি বারবার গ্রেফতার ও কারাদন্ডের শিকার হন।
সাংবাদিকতা দিয়ে তার কর্মজীবন শুরু হয়। ১৯৪৯ সালে মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী পরিচালিত সাপ্তাহিক ইত্তেফাক পত্রিকায় যোগদানের মাধ্যমে তিনি তার সাংবাদিক জীবন শুরু করেন। পরে ১৯৫৮ সালে দৈনিক সংবাদ-এর সহকারী সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন এবং তার পরবর্তী জীবন সাংবাদিকতা ও লেখালিখিতে কাটান।
শহীদুল্লাহ কায়সার একজন প্রতিভাবান লেখকও ছিলেন। তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাসের মধ্যে 'সারেং বউ', 'সংশপ্তক', 'কৃষ্ণচূড়া মেঘ', 'তিমির বলয়' প্রভৃতি অন্যতম। তিনি সাহিত্যে অবদানের জন্য বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৬৯), মরণোত্তর একুশে পদক (১৯৮৩) এবং স্বাধীনতা পুরস্কার (১৯৯৮) লাভ করেন।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময়, ১৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী এবং আল-বদর বাহিনীর সদস্যরা তাকে ঢাকার ২৯, বিকে গাঙ্গুলী লেনের তার বাসা থেকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। ধারণা করা হয়, অপহরণকারীদের হাতেই তিনি নিহত হন। তার অনুজ, জহির রায়হানও একইভাবে নিখোঁজ হন।
শহীদুল্লাহ কায়সারের ব্যক্তিগত জীবনে ১৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ সালে পান্না কায়সারের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের দুই সন্তান, শমী কায়সার ও অমিতাভ কায়সার রয়েছে। পান্না কায়সার একজন লেখক এবং রাজনীতিবিদ ছিলেন।
শহীদুল্লাহ কায়সারের জীবন ও কর্ম সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য পাওয়া গেলে, আমরা এই নিবন্ধটি আপডেট করব।