শবে মেরাজ: ইসলামের এক অলৌকিক রাত
ইসলাম ধর্মে লাইলাতুল মেরাজ বা মেরাজের রাত (যা সাধারণত শবে মেরাজ নামে পরিচিত) হলো সেই রাত যখন হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ঐশ্বরিক উপায়ে ঊর্ধ্বাকাশে আরোহণ করেছিলেন এবং স্রষ্টার সাথে সাক্ষাৎ করেছিলেন। অনেক মুসলমান এ রাতে বিশেষ এবাদত-বন্দেগী করে উদযাপন করেন। আবার অনেকেই এ উদযাপনকে বিদআত মনে করেন।
মেরাজের ইতিহাস:
ইসলামী ইতিহাস অনুসারে, মুহাম্মদ (সাঃ) এর নবুওয়াতের দশম বর্ষে (৬২১ খ্রিস্টাব্দে), এক রাতে তিনি প্রথমে মক্কার কাবা শরিফ থেকে জেরুজালেমের বায়তুল মুকাদ্দাসে গমন করেন (ইসরা)। সেখানে তিনি নবীদের জামাতে ইমামতি করেন। এরপর বোরাক নামক এক বিশেষ বাহনে আরোহণ করে ঊর্ধ্বলোকে উঠেন (মেরাজ)। সিদরাতুল মুনতাহায় তিনি আল্লাহর সাক্ষাত লাভ করেন। এই সমগ্র যাত্রায় জিবরাইল (আঃ) তাঁর সঙ্গী ছিলেন।
কুরআনে মেরাজের উল্লেখ:
যদিও কুরআনে 'মেরাজ' শব্দটি সরাসরি উল্লেখ নেই, তবে সুরা বনি ইসরাঈলের প্রথম আয়াতে ইসরা ও মেরাজের ঘটনার ইঙ্গিত রয়েছে।
মেরাজের সময়কাল:
মেরাজ কখন ঘটেছিল তা নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। এক মতে হিজরতের ১ বছর আগে, আরেক মতে ৫ বছর আগে। কোন মাসে তা নিয়েও মতবিরোধ আছে (রবিউল আউয়াল, রজব, রমজান)। ২৬ তারিখ দিবাগত রাতের ঘটনা বর্ণনা বিশুদ্ধ সনদে প্রমাণিত নয়।
মেরাজের প্রকৃতি:
কিছু চিন্তাবিদ মনে করেন, এটি দৈহিক নয়, বরং আত্মিক আরোহণ ছিল। আয়েশা (রাঃ) ও আবু সুফিয়ান (রাঃ) এ মতে বিশ্বাসী ছিলেন বলে কিছু বর্ণনা আছে। কিন্তু অনেক আলেমগণের মতে এই বর্ণনা সনদহীন। সহীহ হাদিসের আলোকে আহলুস সুন্নাহর আলেমগণের মতে মেরাজ সশরীরে ও জাগ্রত অবস্থায় হয়েছিল।
মেরাজের ফলাফল:
মেরাজের ফলে মুসলমানদের জন্য দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হয়।
শবে মেরাজ উদযাপন:
মেরাজের ইতিহাস ইসলামে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও মেরাজ উপলক্ষে বিশেষ রাত উদযাপন নিয়ে ইসলামি চিন্তাবিদদের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে। অধিকাংশ ইসলামি স্কলার শরীয়ত সম্মত যেকোন ইবাদত করার ব্যাপারে সমর্থন দিয়েছেন।
উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি: হযরত মুহাম্মদ (সাঃ), জিবরাইল (আঃ), আয়েশা (রাঃ), আবু সুফিয়ান (রাঃ), মুসা (আঃ), ইবরাহীম (আঃ) ইত্যাদি।
স্থান: মক্কা, কাবা শরীফ, জেরুজালেম, বায়তুল মুকাদ্দাস, সিদরাতুল মুনতাहा, আরশ ইত্যাদি।
গুরুত্বপূর্ণ দিন: রজব মাসের ২৭ তারিখ (ইংরেজি তারিখ হিজরি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়)।