লুনা শামসুদ্দোহা (৪ অক্টোবর ১৯৫৩ - ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১) ছিলেন একজন বিশিষ্ট বাংলাদেশী নারী উদ্যোক্তা। তিনি দোহাটেক নিউ মিডিয়ার চেয়ারম্যান ছিলেন, যা তিনি ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি বাংলাদেশের প্রথম নারী যিনি কোনও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের প্রধান হন। তিনি রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক লিমিটেডের চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ উইমেন ইন টেকনোলজি (বিডব্লিউআইটি) এর প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি ছিলেন।
তিনি তার অসাধারণ অবদানের জন্য ২০০৭ সালে বাংলাদেশ বিজনেস অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন এবং স্থানীয় সফটওয়্যার শিল্পে একজন নারী উদ্যোক্তা হিসেবে কাজের জন্য অনন্যা টপ টেন অ্যাওয়ার্ডে সম্মানিত হন। তিনি এসএমই ফাউন্ডেশন, ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ (আইইউবি) এর বোর্ড সদস্য এবং রাষ্ট্রায়ত্ত আগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড ও জনতা ব্যাংক লিমিটেডের পরিচালক ছিলেন। তিনি প্রযুক্তি, ই-গভর্ন্যান্স এবং নারীর অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ ও ক্ষমতায়নে বিশ্বব্যাপী ফোরামে অংশগ্রহণ করেছেন। তিনি সুইজারল্যান্ডের কাউন্সিল অফ গ্লোবাল থট লিডারস অন ইনক্লুসিভ গ্রোথের সদস্য ছিলেন।
লুনা শামসুদ্দোহার জন্ম ঢাকায় ৪ অক্টোবর ১৯৫৩ সালে। তার বাবার নাম লুৎফর রহমান এবং মায়ের নাম হাসিনা রহমান। তিনি ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজ থেকে এসএসসি এবং হলিক্রস কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
তিনি ১৯৭৮ সালে পরামর্শদাতা হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৮৫ সালে তিনি দ্য এক্সিকিউটিভ সেন্টারের ব্যবস্থাপনা সহযোগী হিসেবে ব্যবসা শুরু করেন। এর আগে তিনি ব্রিটিশ কাউন্সিল ল্যাঙ্গুয়েজ রিসোর্স সেন্টারে ইংরেজি ভাষা শিক্ষক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে ইংরেজি ভাষার লেকচারার হিসেবে কাজ করেন। তিনি ১৯৯২ সাল থেকে দোহাটেকের সাথে যুক্ত ছিলেন। তার প্রতিষ্ঠানটি একটি স্বাধীন সফটওয়্যার বিক্রেতা এবং সিস্টেম ইন্টিগ্রেটর। দোহাটেক উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ এবং বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠান, সরকারি সংস্থা এবং কর্পোরেশনগুলিকে সফটওয়্যার সমাধান সরবরাহ করে। দোহাটেকের গুরুত্বপূর্ণ ক্লায়েন্টদের মধ্যে বিশ্ব ব্যাংক, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, মার্কিন পোস্টাল সার্ভিস, বাংলাদেশ সরকার এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অন্তর্ভুক্ত।
তিনি জাতিসংঘের ৫৯তম কমিশন অন দ্য স্ট্যাটাস অফ উইমেনের দুটি সেশনে প্যানেলিস্ট এবং জাতিসংঘের অনলাইন আলোচনার মডারেটর ছিলেন। তিনি ২০১৫ সালে ব্রাজিলের সাও পাওলোতে জাতিসংঘের আইটিসি ট্রেইলব্লেজারস সামিটে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তিনি ব্যবসায়ী এ.কে.এম. শামসুদ্দোহার সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। এই দম্পতির এক কন্যা রয়েছে। তিনি ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১ সালে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে ক্যান্সারের চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।