লালমাই, কুমিল্লা: ঐতিহ্য, প্রকৃতি ও প্রত্নতত্ত্বের সম্মিলন
বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের কুমিল্লা জেলার একটি প্রশাসনিক এলাকা হল লালমাই উপজেলা। কুমিল্লা জেলার লালমাই পাহাড়ের নামানুসারে এর নামকরণ করা হয়েছে। ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে, ৮ টি ইউনিয়ন নিয়ে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা এবং লাকসাম উপজেলার একাংশ নিয়ে লালমাই উপজেলা গঠিত হয়। এটি কুমিল্লার ১৭তম এবং বাংলাদেশের ৪৯১তম উপজেলা।
ভৌগোলিক অবস্থান ও আয়তন:
লালমাই উপজেলার আয়তন ১৪৭.০৩ বর্গকিলোমিটার। এটি কুমিল্লা জেলার দক্ষিণ-মধ্যাংশে অবস্থিত। উত্তরে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ, দক্ষিণে নাঙ্গলকোট ও লাকসাম, পূর্বে চৌদ্দগ্রাম, এবং পশ্চিমে বরুড়া উপজেলা অবস্থিত। এখানে ডাকাতিয়া ও পুরানো ডাকাতিয়া নদী এবং গুইঙ্গাজুরি খাল রয়েছে। জনসংখ্যা প্রায় ২ লাখ ২০ হাজার ৩২ জন।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব:
লালমাই পাহাড়ের নাম নিয়ে দুটি প্রধান জনশ্রুতি প্রচলিত আছে। একটিতে বলা হয়, রাম-রাবণ যুদ্ধে লক্ষণের আঘাতের চিকিৎসার জন্য হনুমান হিমালয়ের একটি অংশ এনেছিলেন, যার কিছু অংশ এখানে পড়ে লালমাই পাহাড়ের সৃষ্টি হয়। অন্য গল্পে, এক রাজার দুই কন্যার নামানুসারে (লালমতি ও ময়নামতি) পাহাড়ের নামকরণ হয়েছে বলা হয়।
লালমাই পাহাড়ে প্রত্নতাত্ত্বিক অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থান আছে। ১৯৮৯ ও ১৯৯১ সালে অনুসন্ধানে ১১ টি প্রাগৈতিহাসিক প্রত্নক্ষেত্রের সন্ধান পাওয়া গেছে, যা প্রাগৈতিহাসিক কারখানার উপস্থিতি সুচিত করে। শালবন বিহার, ময়নামতি বৌদ্ধবিহার, এবং অন্যান্য প্রত্নস্থান এ পাহাড়ের ঐতিহাসিক গুরুত্ব বৃদ্ধি করেছে। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, সিসিএন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট সালমানপুর এলাকায় অবস্থিত।
আকর্ষণীয় স্থান:
লালমাইতে পর্যটকদের আকর্ষণের জন্য অনেক স্থান রয়েছে। লালমাই পাহাড়ের লাল মাটি, ঘন গাছপালা, শালবন বিহার, বৌদ্ধ বিহার, কুটিলামুড়া, রূপবান মুড়া, চারপত্র মুড়া, বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (বার্ড), নীলাচল পাহাড়, বনকুটির, চণ্ডী মন্দির, নূরজাহান ইকো পার্ক, রাজেশপুর বন, শাহ সুজা বাদশাহ মসজিদ, ধর্মসাগর, ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের বাড়ি, ময়নামতি ওয়ার সেমিট্রি, রাণীর বাংলো, ত্রিশ আউলিয়ার মাজার, নবাব ফয়জুন্নেছার বাড়ি, কুমিল্লা পৌর শিশু পার্ক, চিড়িয়াখানা এবং কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ উল্লেখযোগ্য।
উপসংহার:
লালমাই, কুমিল্লা ঐতিহাসিক, প্রাকৃতিক ও ঐতিহ্যের সুন্দর সংমিশ্রণ। এটি পর্যটন ও গবেষণার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এলাকা।