প্রাচীন গ্রিক পুরাণের এক রহস্যময়ী চরিত্র লামিয়া। সৌন্দর্যের অধিকারী এই রানী এক ভয়ঙ্কর রাক্ষসে পরিণত হয়েছিলেন বলে জনশ্রুতি। গ্রিক ভাষায় লামিয়া শব্দের অর্থ বৃহৎ হাঙর। কিছু কিছু মতে, তার কোমর থেকে সাপের মতো লেজ ছিল। ১৮১৯ সালে জন কিটসের কবিতার মাধ্যমে লামিয়ার জনপ্রিয়তা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে।
ঐতিহাসিকদের মতে, লিবিয়ার রানী লামিয়া মিশরের রাজা বেলাসের কন্যা ছিলেন। পোসেইডন এবং লিইবির নাতনী লামিয়ার জিউসের সাথে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু জিউসের স্ত্রী হেরার রোষানলে তাদের সন্তানদের মৃত্যু হয়। এই ঘটনার পর লামিয়া পাগল হয়ে পড়েন এবং তার সন্তানদের খেয়ে ফেলেন বলে বলা হয়। এই ভয়ঙ্কর ঘটনার পর থেকেই লামিয়া রূপান্তরিত হন এক ভয়ঙ্কর রাক্ষসে। জিউস লামিয়াকে তার চোখ অপসারণ করার ক্ষমতা দান করেছিলেন, কিন্তু এর উদ্দেশ্য এখনও অস্পষ্ট।
কিছু গল্প বলে যে, অভিশাপের ফলে লামিয়া তার চোখ বন্ধ করতে পারতেন না এবং সারাক্ষণ তার মৃত সন্তানদের চিন্তায় ভুগতে থাকতেন। হেরার রাগের কারণেই লামিয়া এমন রূপান্তরের শিকার হয়েছিলেন বলে অনেকে মনে করেন। সারা ইউরোপে লামিয়ার গল্প শিশুদের ভয় দেখানোর জন্য ব্যবহৃত হতো। ন্যানিরা ও মায়েরা তাদের সন্তানদের ভাল আচরণ শেখানোর জন্য লামিয়ার গল্প ব্যবহার করতেন।
১৯০৯ সালে হার্বাট জেমস ড্রাপার লামিয়ার এক অসাধারণ চিত্র অঙ্কন করেন। খ্রিস্টান লেখকরা লামিয়ার ফুসলানো আচরণ নিয়ে সতর্ক করেছেন। ৯ম শতকে রেইমসের আর্চবিশপ হিঙ্কমার লামিয়াকে অতিপ্রাকৃতিক বিপদের তালিকায় স্থান দেন। জন কিটস সহ অন্যান্য কবি লামিয়ার বিভিন্ন দিক তাদের কবিতায় তুলে ধরেছেন। আধুনিক গ্রিসের গ্রামীণ এলাকায় আজও লামিয়ার গল্প জীবন্ত। বুলগেরিয়ার লোককথা ও বাস্ক কিংবদন্তিতে লামিয়াকে গুহা ও স্যাঁতস্যাঁতে স্থানের সাথে জুড়ে দেখানো হয়।