লস অ্যাঞ্জেলেস

লস অ্যাঞ্জেলেস: স্বপ্নের নগরী

লস অ্যাঞ্জেলেস (ইংরেজি: Los Angeles, স্প্যানিশ: Los Ángeles), যা ‘দেবদূতদের শহর’ নামেও পরিচিত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের একটি বিশাল নগরী। প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূলে অবস্থিত এই মহানগরীটি তার বিশাল আয়তন, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, চমৎকার আবহাওয়া, জাতিগত বৈচিত্র্য, হলিউডের মতো বিশ্বখ্যাত বিনোদন শিল্প, এবং শক্তিশালী অর্থনীতির জন্য বিখ্যাত। এল.এ. (L.A.) নামে সংক্ষেপে পরিচিত এই শহরটি ক্যালিফোর্নিয়ার বৃহত্তম, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং উত্তর আমেরিকার তৃতীয় বৃহত্তম শহর।

ভৌগোলিক অবস্থান ও আবহাওয়া:

লস অ্যাঞ্জেলেস প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূলের একটি সমতল ভূমিতে অবস্থিত। পশ্চিমে সমুদ্র সৈকত, পূর্বে স্যান গেব্রিয়েল পর্বতমালা এবং অন্যান্য দিকে উঁচু পর্বত ও মরুভূমি রয়েছে। স্যান্টা মনিকা পর্বতমালা শহরটিকে দুই ভাগে ভাগ করেছে: পশ্চিমে হলিউড, বেভার্লি হিলস ইত্যাদি এবং পূর্বে স্যান ফের্নান্ডো উপত্যকা। শহরটির আবহাওয়া মৃদু ও ভূমধ্যসাগরীয় ধরনের। গ্রীষ্ম গরম ও শুষ্ক, আর শীত মৃদু ও বৃষ্টিবহুল।

জনসংখ্যা ও বৈচিত্র্য:

লস অ্যাঞ্জেলেস একটি বহুজাতিক, বহুসাংস্কৃতিক শহর। ২০১০ সালের জনগণনা অনুযায়ী, শহরের প্রায় অর্ধেক অধিবাসী হিস্পানিক বা লাতিনো বংশোদ্ভূত। এছাড়াও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শ্বেতাঙ্গ, কৃষ্ণাঙ্গ ও এশীয় বংশোদ্ভূত মানুষ এখানে বাস করে। শহরের অধিকাংশ মানুষের মাতৃভাষা ইংরেজি নয়, বরং স্প্যানিশ।

অর্থনীতি:

লস অ্যাঞ্জেলেস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রধান অর্থনৈতিক কেন্দ্র। চলচ্চিত্র শিল্প, বিমান শিল্প, বহির্বিশ্ব শিল্প, পর্যটন প্রভৃতি এখানে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে। হলিউড বিশ্বের প্রধান বিনোদন শিল্পকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। ২০১৭ সালে লস অ্যাঞ্জেলেস মহানগরীর স্থূল অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ছিল ১ লক্ষ কোটি মার্কিন ডলারেরও বেশি।

ঐতিহাসিক ঘটনা:

আদিতে এই এলাকায় চুমাশ ও তোংভা নামের আদিবাসী আমেরিকান জাতি বসবাস করত। ১৫৪২ সালে স্প্যানিশ ঔপনিবেশিক হুয়ান রোদ্রিগেস কাব্রিইয়ো এলাকাটি দখল করেন। ১৭৮১ সালের ৪ঠা সেপ্টেম্বর একটি ছোট্ট উপনিবেশ হিসেবে লস অ্যাঞ্জেলেসের যাত্রা শুরু হয়। ১৮২১ সালে মেক্সিকোর স্বাধীনতা যুদ্ধের পর এটি মেক্সিকোর অংশ হয় এবং ১৮৪৮ সালে গুয়াদালুপে ইদালগোর চুক্তি অনুযায়ী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অধীনে চলে আসে। ১৯১৩ সালে জলনালির মাধ্যমে পানির সরবরাহ নিশ্চিত হওয়ার পর শহরটি দ্রুত বিকাশ লাভ করে। ১৯৩২, ১৯৮৪ এবং ২০২৮ সালে লস অ্যাঞ্জেলেসে গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক অনুষ্ঠিত হয়েছে।

উল্লেখযোগ্য স্থান:

হলিউড, বেভার্লি হিলস, স্যান্টা মনিকা সমুদ্র সৈকত, গেটি জাদুঘর, লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টি শিল্পকলা জাদুঘর, লস অ্যাঞ্জেলেস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (LAX), লস অ্যাঞ্জেলেস সমুদ্রবন্দর।

লস অ্যাঞ্জেলেস: একটি আধুনিক মহানগরীর চিত্র

লস অ্যাঞ্জেলেস শুধু একটি শহর নয়, এটি একটি স্বপ্নের নগরী। চলচ্চিত্র, বিনোদন ও প্রযুক্তির জগতের সাথে জড়িত এই শহরটি বিশ্বের মানচিত্রে একটি অনন্য স্থান করে নিয়েছে। তবে এর সাথে সাথে এর সমস্যাগুলোও অস্বীকার করা যায় না, যেমন যানজট, বাতাসের দূষণ এবং গৃহহীনতার সমস্যা। তবুও, লস অ্যাঞ্জেলেসের সৌন্দর্য, বৈচিত্র্য এবং বিকাশমান অর্থনীতি এটিকে বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শহর হিসেবে স্থাপন করেছে।

মূল তথ্যাবলী:

  • লস অ্যাঞ্জেলেস, ‘দেবদূতদের শহর’, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার একটি বৃহৎ নগরী।
  • হলিউড, চলচ্চিত্র শিল্প, এবং শক্তিশালী অর্থনীতির জন্য বিখ্যাত।
  • প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূলে অবস্থিত, মৃদু আবহাওয়া এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে সমৃদ্ধ।
  • বহুজাতিক ও বহুসাংস্কৃতিক জনসংখ্যায় সমৃদ্ধ।
  • ১৭৮১ সালে স্প্যানিশ উপনিবেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।
  • ১৯৩২, ১৯৮৪ এবং ২০২৮ সালে গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের আয়োজন করেছে।