রাজশাহী: উত্তরবঙ্গের ঐতিহ্যবাহী মহানগরী
রাজশাহী বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের একটি প্রাচীন ও ঐতিহ্যমণ্ডিত মহানগরী। পদ্মা নদীর তীরে অবস্থিত এই শহরটি সমগ্র উত্তরবঙ্গের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর এবং রাজশাহী বিভাগের প্রশাসনিক কেন্দ্র। অর্থনৈতিকভাবে রাজশাহী বিভাগের মধ্যে বগুড়া জেলা সবচেয়ে উন্নত, রাজশাহী দ্বিতীয়। উচ্চ সাক্ষরতার হারের জন্য একে ‘শিক্ষা নগরী’ হিসেবেও অভিহিত করা হয়। এটি বাংলাদেশের ষষ্ঠ বৃহত্তম ও জনবহুল শহর এবং বিশেষ শ্রেণীভুক্ত জেলা।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব:
রাজশাহীর ইতিহাস অত্যন্ত সমৃদ্ধ। প্রাচীনকালে এটি পুন্ড্র সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। বিখ্যাত সেন বংশের রাজা বিজয় সেনের রাজধানী বর্তমান রাজশাহী শহর থেকে মাত্র ৯ কিমি দূরে অবস্থিত ছিল। মধ্যযুগে রাজশাহী ‘রামপুর-বোয়ালিয়া’ নামে পরিচিত ছিল (বর্তমানেও একটি থানার নাম বোয়ালিয়া)। ১৭৭২ সালে রাজশাহীকে জেলা হিসেবে গঠন করা হয় এবং ১৮৭৬ সালে পৌরসভা, ১৯৯১ সালে সিটি কর্পোরেশনে রূপান্তরিত হয়। ১৮৯৭ সালে ভয়াবহ ভূমিকম্পে শহরের অধিকাংশ ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
রেশম নগরী ও কৃষি সম্পদ:
রাজশাহী তার আকর্ষণীয় রেশমীবস্ত্র, আম, লিচু এবং মিষ্টান্ন (বিশেষ করে বগুড়ার দই) জন্য বিখ্যাত। রেশম চাষের জন্য একে ‘রেশম নগরী’ও বলা হয়। উর্বর বরেন্দ্রভূমি রাজশাহীর কৃষিক্ষেত্রকে সমৃদ্ধ করেছে।
শিক্ষা ও সংস্কৃতি:
রাজশাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য সমৃদ্ধ। বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং দেশসেরা রাজশাহী কলেজ এখানেই অবস্থিত। অসংখ্য অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। ঐতিহাসিক মসজিদ, মন্দির ও অন্যান্য ঐতিহাসিক স্থাপনা রাজশাহীর ঐতিহ্যকে আরও সমৃদ্ধ করেছে। এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন এবং সবুজ শহরগুলির মধ্যে অন্যতম।
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস:
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে রাজশাহী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। রাজশাহী পুলিশ লাইনের প্রতিরোধ যুদ্ধ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে স্মরণীয়।
অর্থনীতি:
রাজশাহীর অর্থনীতিতে কৃষি, রেশম, বস্ত্র শিল্প প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাইটেক পার্ক রাজশাহীর আইটি খাতের উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে।
প্রকৃতি ও জলবায়ু:
রাজশাহীর জলবায়ু ক্রান্তীয় আর্দ্র ও শুষ্ক। বর্ষা, উচ্চ তাপমাত্রা, আর্দ্রতা এবং মাঝারি বৃষ্টিপাত এর বৈশিষ্ট্য। বায়ুদূষণের দিক থেকে এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে পরিষ্কার শহরগুলির মধ্যে একটি।