রাজবাড়ী: ঐতিহাসিক ঐশ্বর্যের ধারক
বাংলাদেশের ঢাকা বিভাগের অন্তর্গত রাজবাড়ী জেলা, পদ্মা নদীর তীরে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক শহর। প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য ও সমৃদ্ধ ঐতিহাসিক গৌরবে পরিপূর্ণ রাজবাড়ী শুধুমাত্র জেলা শহর নয়, বরং একটি গৌরবোজ্জ্বল অতীতের সাক্ষী। ১৯৮৪ সালে জেলা হিসেবে মর্যাদা লাভের পূর্বে রাজবাড়ী ছিল ফরিদপুর জেলার অংশ।
ভৌগোলিক অবস্থান ও জনসংখ্যা:
রাজবাড়ী জেলার আয়তন প্রায় ১০৯২.২৮ বর্গ কিলোমিটার। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, জেলার জনসংখ্যা প্রায় ১০৪৯৭৭৮, যার মধ্যে পুরুষ ৫১৯৯৯৯ এবং মহিলা ৫২৯৭৭৯। মুসলিম ৯৪২৫২৭, হিন্দু ১০৬৯৭৪, খ্রিস্টান ১৮৯, বৌদ্ধ ৪ এবং অন্যান্য ৮৪ জন।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব:
রাজবাড়ীর নামকরণের সঠিক ইতিহাস অস্পষ্ট হলেও, জনশ্রুতি ও ঐতিহাসিক তথ্য অনুসারে রাজা সংগ্রাম শাহ বা রাজা সূর্য কুমারের নামানুসারে এর নামকরণ হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। ১৬৬৬ খ্রিস্টাব্দে নবাব শায়েস্তা খান ঢাকার সুবাদার হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার পর পর্তুগীজ জলদস্যুদের দমনে সংগ্রাম শাহের ভূমিকা রাজবাড়ীর ঐতিহাসিক গুরুত্ব বৃদ্ধি করেছে। ১৮৯০ সালে রাজবাড়ী রেলওয়ে স্টেশনের স্থাপন শহরের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
মুক্তিযুদ্ধে রাজবাড়ীর অবদান:
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে রাজবাড়ী জেলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মুক্তিযোদ্ধাদের অক্লান্ত সংগ্রামের ফলে ১৮ ডিসেম্বর রাজবাড়ী শত্রুমুক্ত হয়। এই ঐতিহাসিক দিনটি রাজবাড়ী মুক্তি দিবস হিসেবে পালিত হয়।
অর্থনীতি:
রাজবাড়ীর অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর। ধান, পাট, আখ, তিল প্রধান কৃষি ফসল। এছাড়াও, তাঁতশিল্প ও রেশমশিল্পের মাধ্যমে এখানে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধিত হচ্ছে।
উল্লেখযোগ্য স্থান:
- রাজবাড়ী রেলওয়ে স্টেশন
- লালগোলা দুর্গ (ধ্বংসাবশেষ)
- রাজবাড়ী সরকারি কলেজ
- রাজবাড়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়
- মীর মশারফ হোসেনের মাযার (বালিয়াকান্দি)
- গোয়ালন্দ ফেরি ঘাট
রাজবাড়ী সমৃদ্ধ ঐতিহাসিক গৌরব ও প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের সাথে আধুনিক বিকাশের সুন্দর মিশ্রণ। এটি একটি দর্শনীয় এবং পরিদর্শনযোগ্য স্থান।