বাংলাদেশে যৌথ অভিভাবকত্ব নিয়ে আইনি ও সামাজিক দিকগুলো বিশ্লেষণ
বাংলাদেশে সন্তানের অভিভাবকত্ব নিয়ে আইনি লড়াইয়ের ঘটনা নিত্যদিনের ব্যাপার হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে বিবাহ বিচ্ছেদের পর সন্তানের অভিভাবকত্ব কে পাবে সেটা নিয়ে পিতা-মাতার মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। প্রচলিত আইন অনুযায়ী, পিতাই সাধারণত নাবালক সন্তানের আইনগত অভিভাবক। কিন্তু সন্তানের সর্বোত্তম স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে আদালত মায়ের জিম্মায় সন্তান রাখার সিদ্ধান্ত দিতে পারে।
আইনি জটিলতা:
বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে সন্তানের অভিভাবকত্ব নির্ধারণে বেশ কিছু জটিলতা রয়েছে। এই জটিলতাগুলির মধ্যে অন্যতম হলো অভিভাবকত্বের আইনি সংজ্ঞা এবং পিতা-মাতার মধ্যে অভিভাবকত্বের অধিকার বণ্টন। ছেলে সন্তানের ক্ষেত্রে ৭ বছর এবং মেয়ে সন্তানের ক্ষেত্রে বয়ঃসন্ধি পর্যন্ত মায়ের জিম্মায় থাকার বিধান রয়েছে।
যৌথ অভিভাবকত্বের ধারণা:
বিশ্বের অনেক দেশে যৌথ অভিভাবকত্ব (Joint Custody) বা সম্মিলিত অভিভাবকত্ব প্রচলিত। এর অর্থ হলো পিতা-মাতা উভয়েই সন্তানের যত্ন, লালন-পালন এবং শিক্ষার দায়িত্ব বহন করবে। এতে সন্তানের কাছে বাবা-মা উভয়েরই সমান অধিকার থাকে। যৌথ অভিভাবকত্বের ফলে সন্তান বাবা-মায়ের দুজনের সাথেই সুস্থ সম্পর্ক বজায় রাখতে পারে এবং মানসিকভাবে সুস্থ থাকে।
বাংলাদেশে যৌথ অভিভাবকত্বের প্রাসঙ্গিকতা:
বাংলাদেশে যৌথ অভিভাবকত্বের ধারণা এখনো তেমন প্রচলিত নয়। তবে সমাজের পরিবর্তনশীল প্রেক্ষাপটে এবং সন্তানের সর্বোত্তম স্বার্থ বিবেচনায় এটি গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। যদিও প্রচলিত আইনে এর স্পষ্ট কোনো বিধান নেই।
পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা:
সন্তানের সর্বোত্তম স্বার্থ নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে পরিবর্তন আনার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। যৌথ অভিভাবকত্বের ধারণাকে আইনি স্বীকৃতি দিয়ে এবং পিতা-মাতার অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কে স্পষ্ট নির্দেশনা প্রদান করে আইন সংশোধন করা প্রয়োজন। এতে বিবাহবিচ্ছেদের পর সন্তানের জীবনে স্থিতিশীলতা আনা যাবে এবং সামাজিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা সম্ভব হবে। আরও গুরুত্বপূর্ণ হলো সন্তানের কল্যাণ নিশ্চিত করে তাদের জন্য সুন্দর একটি ভবিষ্যৎ নির্মাণ করা।