ময়নাতদন্ত: অস্বাভাবিক মৃত্যুর রহস্য উন্মোচনের পথ
অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় মৃতদেহের বিশ্লেষণের মাধ্যমে মৃত্যুর কারণ নির্ণয়ের প্রক্রিয়াটিকেই ময়নাতদন্ত বলা হয়। একে পোস্টমর্টেম বা অটোপসিও বলা হয়। বাংলাদেশে প্রতিবছর কয়েকশ ময়নাতদন্ত হলেও, বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে আলাদা আলাদাভাবে হওয়ায় এর সঠিক সংখ্যা জানা সম্ভব নয়।
ময়নাতদন্তের প্রধান উদ্দেশ্য হলো মৃত্যুর কারণ নির্ণয় করা। কোন ব্যক্তির অস্বাভাবিক মৃত্যু হলে, বা তার মৃত্যু নিয়ে সন্দেহ থাকলে ময়নাতদন্ত করা হয়। এতে মৃতদেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পরীক্ষা করে মৃত্যুর কারণ বের করা হয়।
প্রয়োজন অনুসারে, শরীরের ভেতরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়। যেমন, ধর্ষণের অভিযোগে সিমেন সংগ্রহ করে ডিএনএ মিলান করা হয়; আত্মহত্যার অভিযোগে ভিসেরা পরীক্ষা করে বিষক্রিয়ার প্রমাণ খোঁজা হয়। অসুস্থতাজনিত কারণে মৃত্যু হলেও, যদি মৃত্যু নিয়ে বিতর্ক থাকে, তাহলেও ক্লিনিক্যাল পোস্টমর্টেম করা হয়।
ময়নাতদন্তের মাধ্যমে মৃত্যু কীভাবে, কখন ও কেন হয়েছে, সে সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়। এছাড়াও, রোগের ছড়াছড়ি সম্পর্কে বোঝার জন্যও ময়নাতদন্ত সাহায্য করে।
‘ময়না’ শব্দটি আরবি, ফার্সি বা উর্দু থেকে এসেছে, যার অর্থ ভালোভাবে খোঁজা বা অনুসন্ধান করা। ‘তদন্ত’ শব্দটি সংস্কৃত। এই দুটি শব্দ মিলে ‘ময়নাতদন্ত’ শব্দটি তৈরি হয়েছে। অটোপসি শব্দটি গ্রিক থেকে এসেছে, এর অর্থও একই।
প্রাচীন গ্রিসে গ্যালেন অফ পারগামাম প্রথম ময়নাতদন্তের রেকর্ড রেখেছিলেন। হত্যা, আত্মহত্যা, দুর্ঘটনা ইত্যাদি অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় ময়নাতদন্ত করা হয়। পুলিশ প্রথমে সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে। এরপর মর্গে ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকরা মৃতদেহের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ অবস্থা পরীক্ষা করে প্রতিবেদন তৈরি করেন। ময়নাতদন্তের পর মৃতদেহ আবার সেলাই করে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়া হয়, যদিও কিছু অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পরীক্ষার জন্য রাখা হতে পারে।
ময়নাতদন্তে মৃত্যুর কারণ ও সময় জানা, ধর্ষণ, আঘাত, বিষক্রিয়া ইত্যাদি বিষয় জানা গুরুত্বপূর্ণ। ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ বেশ কয়েকটি মেডিকেল কলেজ ও আড়াইশো শয্যার হাসপাতালে ময়নাতদন্ত করা হয়। ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসকরা এ কাজটি করেন। দ্রুত ময়নাতদন্ত করা গুরুত্বপূর্ণ, তবে দীর্ঘদিন পরেও পুনরায় ময়নাতদন্তের ঘটনা রয়েছে।
ময়নাতদন্তের বিভিন্ন ধরণ রয়েছে, যেমন মেডিকেল, একাডেমিক ও ক্লিনিক্যাল। অনেক সময় অস্বাভাবিক মৃত্যুতেও পরিবারের অনুরোধে ময়নাতদন্ত ছাড়াই মৃতদেহ হস্তান্তর করা হয়।