ম্যাচ ফিক্সিং

ম্যাচ ফিক্সিং: ক্রীড়াঙ্গনের কলঙ্ক

খেলার ফলাফলে ছলচাতুরি, অর্থাৎ ম্যাচ ফিক্সিং, ক্রীড়া জগতের একটি গর্হিত অপরাধ। এতে কোনো খেলার ফলাফল অথবা এর নির্দিষ্ট কোনো অংশ আগেই ঠিক করে নেওয়া হয়। খেলার নিয়ম ও নীতি লঙ্ঘন করেই এমনটা করা হয়। মূলত জুয়াড়িদের আর্থিক লাভের জন্যই ম্যাচ ফিক্সিং করা হয়। তবে, কখনো কখনো খেলোয়াড়রাও নিজেদের সুবিধার জন্য (যেমন ভালো ড্রাফট, দুর্বল প্রতিপক্ষ) ম্যাচ ফিক্সিংয়ের সঙ্গে জড়িত থাকে। এমনকি, দলগতভাবেও এমনটা করা হতে পারে ভবিষ্যৎ সুবিধার জন্য।

জুয়াড়িরা খেলোয়াড়, কর্মকর্তা, এবং/অথবা রেফারির সঙ্গে যোগাযোগ করে (এবং অর্থ লেনদেন করে) ম্যাচ ফিক্সিং করে। এ ধরনের লেনদেন চিহ্নিত হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কিন্তু পুরো দলের জড়িত থাকলে তা প্রমাণ করা কঠিন। কোচ খারাপ পারফর্ম্যান্স নিশ্চিত করার জন্য খেলোয়াড় বদল করে, গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় বসিয়ে রেখে অথবা ইচ্ছাকৃত ইনজুরির অজুহাত দেখায়।

ম্যাচ ফিক্সিংয়ের আরেকটি রূপ হল স্পট ফিক্সিং, যেখানে খেলার ছোট্ট একটা অংশ নিয়ন্ত্রণ করা হয়, যা চূড়ান্ত ফলাফলে খুব বেশি প্রভাব ফেলে না। ম্যাচ ফিক্সিংকে গেম ফিক্সিং, রেস ফিক্সিং, স্পোর্টস ফিক্সিং, অথবা হিপোড্রোমিংও বলা হয়। ইচ্ছেকৃতভাবে ম্যাচ হারাকে ম্যাচ ছেড়ে দেয়া বলে অভিহিত করা হয়, আর ইচ্ছে করে খারাপ খেলাকে বলা হয় ‘ট্যাংকড’।

জুয়া ও ভবিষ্যৎ সুবিধা ম্যাচ ফিক্সিংয়ের প্রধান কারণ। ১৯১৯ সালের ‘ব্ল্যাক সক্স কলঙ্ক’ এর সবচেয়ে কুখ্যাত উদাহরণ। ১৯৩৩ সালের ট্রিপলি গ্রান্ড প্রিক্সে রেস ফিক্সিংয়ের একটি পরিচিত ঘটনা ঘটেছিলো।

sportrader-এর মতে, তারা যে সব ম্যাচ পর্যবেক্ষণ করে, তার অন্তত এক-চতুর্থাংশে ফিক্সিং হয়। ম্যাচের আগে ও পরে জুয়া বাজার পর্যবেক্ষণ করে ফিক্সিং চিহ্নিত করা যায়। অনেক ফেডারেশন ম্যাচ ফিক্সিং প্রতিরোধে খেলোয়াড় ও কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেয়।

একাধিক রাউন্ডের টুর্নামেন্টে প্রথম রাউন্ড হেরে পরবর্তীতে সহজ প্রতিপক্ষ পেতে ইচ্ছে করে হারার ঘটনাও আছে। আমেরিকান খেলাধুলার জগতে এটিকে তেমন খারাপ চোখে দেখা হয় না। যুক্তরাষ্ট্রের এনবিএ (২০০৫-০৬ মৌসুমে লস অ্যাঞ্জেলেস ক্লিপার্স), এনএফএল-এর এমন অভিযোগ আছে। ১৯৮৮ সালে সান ফ্রান্সিসকো ফোরটি-নাইনার্স ও লস অ্যাঞ্জেলেস র্যামসের মধ্যকার ম্যাচটি উল্লেখযোগ্য। কানাডিয়ান ফুটবল লিগেও এমন অভিযোগ আছে। ২০০৬ সালের শীতকালীন অলিম্পিকের আইস হকিতে সুইডেন ও স্লোভাকিয়ার ম্যাচের উল্লেখযোগ্য। ১৯৯৮ সালের টাইগার কাপে থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়ার মধ্যকার ম্যাচেও এমন ঘটনা ঘটেছিলো। ২০০৬ সালের শীতকালীন অলিম্পিকের আইস হকি প্রতিযোগিতা এবং ২০১২ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকেও এমন ঘটনার সম্ভাব্য উদাহরণ ছিল। ম্যাচ ফিক্সিং ক্রীড়াঙ্গনের জন্য একটি বড় হুমকি এবং এর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।

মূল তথ্যাবলী:

  • ম্যাচ ফিক্সিং হলো খেলার ফলাফলে ছলচাতুরি
  • জুয়াড়িরা মূলত ম্যাচ ফিক্সিং করে আর্থিক লাভের জন্য
  • খেলোয়াড়রাও নিজেদের সুবিধার জন্য এতে জড়িত থাকে
  • স্পট ফিক্সিং হলো ম্যাচের ছোট অংশ নিয়ন্ত্রণ করা
  • ব্ল্যাক সক্স কলঙ্ক ম্যাচ ফিক্সিং এর কুখ্যাত উদাহরণ