মোহাম্মদ সাইফুল আলম: এক বিলিয়ন ডলারের অর্থপাচারের অভিযোগে তদন্তের আওতায়
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বর্তমানে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম এবং তার পরিবারের বিরুদ্ধে এক বিলিয়ন ডলারের অর্থপাচারের অভিযোগে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে। তদন্তের অংশ হিসেবে দুদক ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ থেকে সাইফুল আলমের মালিকানাধীন বিভিন্ন কোম্পানির ঋণের নথিপত্র চেয়েছে এবং ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছে। ২০১৭ সালে ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকে সাইফুল আলমের কোম্পানিগুলোকে ন্যূনতম জামানতের বিপরীতে বিপুল পরিমাণ ঋণ দেওয়া হয়েছে বলে তদন্তে উঠে এসেছে।
উদাহরণস্বরূপ, এস আলম সুপার এডিবল অয়েল লিমিটেড ৩১৬৬ কোটি টাকার ঋণ পেয়েছে, যেখানে জামানত ছিল মাত্র ১০৪ কোটি টাকা। এস আলম ভেজিটেবল লিমিটেডের সহযোগী প্রতিষ্ঠান সোনালী ট্রেডার্স ৩১৪ কোটি টাকার জামানতের বিপরীতে ৪৮৯০ কোটি টাকার ঋণ পেয়েছে। এস আলম পাওয়ার জেনারেশন, এস আলম স্টিলস লিমিটেড, ইউনিটেক্স এলপি গ্যাস, ইউনিটেক্স স্টিল মিলস, ইউনিটেক্স কম্পোজিট মিলস এবং এস আলম ট্রেডিং প্রাইভেট লিমিটেডসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও একই ধরণের অনিয়ম ধরা পড়েছে।
দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আখতার হোসেন জানিয়েছেন, বড় কোম্পানিগুলোর ঋণ অনিয়মের তথ্য তদন্ত করা হচ্ছে এবং আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান অভিযোগ করেছেন, এস আলম গ্রুপ ডিজিএফআই-এর সহায়তায় বেশ কিছু ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে তহবিল লুট করে বিদেশে পাচার করেছে। ৫ সেপ্টেম্বর ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জানিয়েছিলেন, এস আলম গ্রুপ ব্যাংকের মোট ঋণের অর্ধেকের বেশি নিয়েছে।
১৯ ডিসেম্বর আদালতের নির্দেশে সাইফুল আলম ও তার পরিবারের ১২৫টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়, যেখানে ২২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা জমা ছিল। দুদক প্রাথমিকভাবে আটটি কোম্পানির তথ্য চেয়েছিল, পরে আরও কোম্পানির তথ্য সংগ্রহের কথা জানিয়েছে। ২০১৭ সাল থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত এস আলম গ্রুপ ইসলামী ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ করেছিল। ৪ আগস্ট ২০২৩ সালে অর্থপাচারের প্রতিবেদন প্রকাশের পর ১৩ আগস্ট দুদক তদন্ত শুরু করে। আপিল বিভাগের নির্দেশে সাময়িকভাবে স্থগিত থাকার পর নভেম্বর মাসে পুনরায় শুরু হয় তদন্ত। ৭ অক্টোবর আদালত সাইফুল আলম, তার স্ত্রী, সন্তান এবং ভাইসহ ১৩ জনের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারি করে।