মূল্য

মূল্য সংযোজন কর (মূসক): বাংলাদেশের অর্থনীতির এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১৯৯১ সালের ১লা জুলাই থেকে কার্যকর এই কর ব্যবস্থা দেশের রাজস্ব আয়ের এক উল্লেখযোগ্য অংশ। এই প্রবন্ধে আমরা মূসকের ইতিহাস, প্রয়োগ, সুবিধা-অসুবিধা এবং বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এর প্রভাব সম্পর্কে বিশদ আলোচনা করবো।

মূসকের ইতিহাস:

১৯৭৯ সালে করারোপ তদন্ত কমিশন প্রথম মূসক চালুর প্রস্তাব করে। বিক্রয় করের বিকল্প হিসেবে বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় এই ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ১৯৮৬ সালে বিশ্বব্যাংকের একটি মিশন বাংলাদেশ সফর করে এবং ১৯৮৯ সালে তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে একক প্রমাণ কর-হারের মূসক চালুর সুপারিশ করে। এরপর বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করে অভিজ্ঞতা অর্জন করে এবং শিল্প ও বণিক সমিতিসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে আলোচনার পর ১৯৯১ সালে মূসক আইন পাস হয়। মূল্য সংযোজন কর আইন ১৯৯১, ৩১ মে ১৯৯১ তারিখে অধ্যাদেশ হিসেবে জারি করা হয় এবং ১ জুলাই ১৯৯১ থেকে কার্যকর হয়।

মূসকের প্রয়োগ:

মূসক একটি পরোক্ষ কর যা পণ্য বা সেবার উৎপাদন ও বণ্টনের প্রতিটি পর্যায়ে সংযোজিত মূল্যের ওপর আরোপ করা হয়। এই কর ব্যবস্থায় রপ্তানি পণ্যের জন্য শূন্য হারের মূসক আরোপ করা হয়। প্রাথমিকভাবে আমদানি ও উৎপাদন পর্যায়ে প্রযোজ্য মূসক পরবর্তীতে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়েও বিস্তৃত হয়। মূসকের প্রমাণ কর-হার ১৫%। তবে সম্পূরক শুল্কের হার পণ্যভেদে ভিন্ন। কৃষিজাত দ্রব্য ও কিছু খাদ্যদ্রব্য মূসকের আওতা বহির্ভূত।

মূসকের উদ্দেশ্য:

মূসক চালুর লক্ষ্য ছিল করারোপ পদ্ধতিতে স্বচ্ছতা আনা, জলপ্রপাত করারোপ বন্ধ করা, কর প্রশাসনকে সুসংহত করা, অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ বৃদ্ধি করা এবং কর-স্থূল দেশজ উৎপাদ অনুপাতে সামঞ্জস্য আনা।

মূসকের প্রভাব:

মূসক প্রবর্তনের ফলে বাংলাদেশের কর রাজস্ব আয় উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে কর-স্থূল দেশজ উৎপাদ অনুপাত এখনও দক্ষিণ এশিয়ার গড়ের চেয়ে কম। ১৯৯০-৯১ অর্থবছরে বিক্রয় কর ও আবগারি শুল্ক মিলিয়ে ২৫৫০ কোটি টাকা রাজস্ব আয় হয়েছিল। মূসক চালুর প্রথম বছরে (১৯৯১-৯২) এ পরিমাণ বেড়ে ৩১৪০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছিল। ২০২১-২২ অর্থবছরে মূসক আহরণের পরিমাণ ছিল ১১৫২.২ বিলিয়ন টাকা।

উপসংহার:

মূসক বাংলাদেশের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং রাজস্ব আয়ের প্রধান উৎস। তবে এর প্রভাব আরও বৃদ্ধির জন্য প্রশাসনিক সুষ্ঠুতা ও কর প্রক্রিয়ায় আরও উন্নয়নের প্রয়োজন রয়েছে।

মূল তথ্যাবলী:

  • ১৯৯১ সালের ১লা জুলাই মূসক কার্যকর হয়।
  • মূসকের প্রধান হার ১৫%।
  • মূসক রাজস্ব আয়ের একটি প্রধান উৎস।
  • রপ্তানি পণ্যে শূন্য হারের মূসক।
  • কৃষিজাত দ্রব্য ও কিছু খাদ্যদ্রব্য মূসকের বাইরে।