মুজাহিদ আহমদ

আপডেট: ৬ জানুয়ারী ২০২৫, ৭:৩২ এএম

শায়খুল ইসলাম আল্লামা মুজাহিদ আহমদ বায়ামপুরী: একজন খ্যাতনামা আলেম, রাজনীতিক ও সমাজ সংস্কারক

আল্লামা মুজাহিদ আহমদ বায়ামপুরী ছিলেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) একজন বিশিষ্ট আলেম, রাজনীতিক, সমাজ সংস্কারক এবং লেখক। উপমহাদেশে তিনি হাদিস বিশারদ হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন। তার জন্ম ১৯০৭ সালে বা ১৩২৭ হিজরির মহররম মাসের শুক্রবারে সিলেট জেলার কানাইঘাট উপজেলার বায়ামপুর গ্রামে। তার পিতার নাম ছিল কারী আলিম বিন দানিশ মিয়া এবং মাতার নাম সুফিয়া বেগম।

প্রাথমিক শিক্ষা তিনি মায়ের কাছেই লাভ করেন, যিনি ছিলেন কুরআনের হাফেজা। মাত্র সাত বছর বয়সে তিনি কুরআন শেষ করেন এবং বাংলা ও উর্দু ভাষায়ও দক্ষতা অর্জন করেন। কানাইঘাট ইসলামিয়া মাদরাসা (বর্তমানে দারুল উলুম কানাইঘাট) থেকে তিনি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। পরে লালারচক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কিছুদিন শিক্ষকতা করার পর ভারতে গিয়ে রামপুর আলিয়া মাদরাসা এবং মিরাঠ আলিয়া মাদরাসায় উচ্চশিক্ষা লাভ করেন। সাত বছরের ভারত ভ্রমণের পর তিনি দেশে ফিরে আসেন এবং লালারচর রহমানিয়া মাদরাসায় শিক্ষকতা করেন।

১৯৩৬ সালে তিনি উচ্চশিক্ষার জন্য আবার ভারতে যান এবং দারুল উলুম দেওবন্দে ভর্তি হন। দেড় বছরের অধ্যয়নের পর তিনি সর্বোচ্চ ডিগ্রি লাভ করেন এবং কয়েকটি বিষয়ে রেকর্ড সংখ্যক নম্বর পান। দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে পড়াশোনা শেষ করে ভারতে কিছুকাল শিক্ষকতা করার পর তিনি সিলেট ফিরে আসেন এবং সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা এবং গাছবাড়ি জামিউল উলুম কামিল মাদরাসায় শাইখুল হাদিস হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৫৩ সালে তিনি নিজ জন্মস্থানের কানাইঘাট ইসলামিয়া মাদরাসায় যোগদান করেন এবং এই মাদরাসার পরিচালক ও শাইখুল হাদিস হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এই মাদরাসার নাম পরে দারুল উলুম কানাইঘাট রাখা হয়। মৃত্যু পর্যন্ত তিনি এখানেই দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৫৩ সালে পূর্ব সিলেট আযাদ দীনি আরবী মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড গঠন করেন এবং জীবনব্যাপী এর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

রাজনীতিতে তিনি মাওলানা হোসাইন আহমদ মাদানীর অনুসারী ছিলেন এবং জমিয়ত উলামায়ে ইসলাম পূর্ব পাকিস্তানের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। তিনি তিনবার পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন (১৯৬২, ১৯৬৫ ও ১৯৭০)। ১৯৬২ সালে তিনি এমএনএ (মেম্বার অব ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি) নির্বাচিত হন। তিনি পাকিস্তানের সংবিধানে ইসলামী বিধান সন্নিবেশনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন।

আল্লামা মুজাহিদ আহমদ বায়ামপুরী ধর্মীয় গোঁড়ামি ও কুসংস্কার বিরোধী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি সিলেট অঞ্চলে ওয়াজ-নসিহত করে বেড়াতেন এবং মানুষকে ইসলামের সঠিক পথে নেতৃত্ব দিতেন। তিনি ইসলামের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মূল্যবান গ্রন্থ রচনা করেছেন। তিনি মোট ১০টি বিবাহ করেছিলেন এবং ১১ সন্তানের জনক ছিলেন। তিনবার তিনি হজ্জ পালন করেছেন। তিনি ১৯৭১ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন এবং কানাইঘাট দারুল উলুম মাদরাসার সামনে দাফন করা হয়। তার কবর থেকে কিছুদিন সুগন্ধি বের হওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়।

আল্লামা মুজাহিদ আহমদ বায়ামপুরীর জীবনী বিভিন্ন বই ও সাময়িকীতে স্থান পেয়েছে। তার জ্ঞানের পরিধি ও অবদানকে উপমহাদেশের বিভিন্ন বিশিষ্ট জনেরা প্রশংসা করেছেন।

মূল তথ্যাবলী:

  • মুজাহিদ আহমদ বায়ামপুরী ছিলেন একজন বিশিষ্ট আলেম, রাজনীতিক ও সমাজ সংস্কারক।
  • তিনি হাদিস বিশারদ হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন।
  • তিনি সিলেটের কানাইঘাট দারুল উলুম মাদরাসার মুহতামিম ও শাইখুল হাদিস ছিলেন।
  • ১৯৬২ সালে তিনি পাকিস্তানের এমএনএ নির্বাচিত হন।
  • তিনি ইসলামের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মূল্যবান গ্রন্থ রচনা করেছেন।

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।