আবুল মনসুর আহমেদ: একজন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী
আবুল মনসুর আহমেদ (৩ সেপ্টেম্বর ১৮৯৮ - ১৮ মার্চ ১৯৭৯) ছিলেন একজন অসাধারণ বাংলাদেশী ব্যক্তিত্ব যিনি একাধারে সাহিত্যিক, রাজনীতিবিদ, আইনজীবী এবং সাংবাদিক হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছেন। তাঁর লেখনী ছিল তীব্র, ব্যঙ্গাত্মক এবং সমাজচেতনায় পরিপূর্ণ। তিনি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্রূপাত্মক রচয়িতা হিসেবে পরিচিত। তাঁর জীবন এবং কর্মকাণ্ড বাংলার ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ এক অধ্যায়।
প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষা:
আবুল মনসুর আহমেদ ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল উপজেলার ধানীখোলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আব্দুর রহিম ফরাজী এবং মাতার নাম মীর জাহান খাতুন। তিনি ১৯১৭ সালে ম্যাট্রিক এবং ১৯১৯ সালে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরবর্তীতে তিনি কলকাতার রিপন কলেজ থেকে আইন শাস্ত্রে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।
রাজনৈতিক জীবন:
আবুল মনসুর আহমেদ তাঁর ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। তিনি খিলাফত আন্দোলন এবং অসহযোগ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। পরবর্তীতে তিনি কৃষক প্রজা সমিতি এবং কৃষক প্রজা পার্টির সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের মনোনয়নে পূর্ববঙ্গ পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন এবং ফজলুল হক মন্ত্রীসভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৫ সালে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়নে পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন এবং পরবর্তীতে শিক্ষামন্ত্রী এবং বণিজ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৯ সালে তিনি দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ময়মনসিংহ-৭ (ত্রিশাল) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
সাংবাদিকতা:
আবুল মনসুর আহমেদ একজন অত্যন্ত প্রতিভাবান সাংবাদিক ছিলেন। তিনি ইত্তেহাদ, সুলতান, মোহাম্মদী, নাভায়ু প্রভৃতি অনেক সংবাদপত্রে কাজ করেছেন। ১৯৪৬ সালে তিনি কলকাতা থেকে প্রকাশিত ইত্তেহাদ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন এবং ভাষা আন্দোলনে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।
সাহিত্যকর্ম:
আবুল মনসুর আহমেদ তাঁর ব্যঙ্গাত্মক লেখার জন্য সুপরিচিত। ‘আয়না’ এবং ‘ফুড কনফারেন্স’ তাঁর বিখ্যাত গল্পগ্রন্থ। এছাড়াও তিনি ‘আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর’ এবং ‘আত্মকথা’ সহ আরও অনেক গ্রন্থ রচনা করেছেন।
সম্মাননা:
আবুল মনসুর আহমেদ ১৯৬০ সালে বাংলা একাডেমী পুরষ্কার এবং ১৯৭৯ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেন।
মৃত্যু:
আবুল মনসুর আহমেদ ১৯৭৯ সালের ১৮ মার্চ ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।
উল্লেখযোগ্য তথ্য:
- তিনি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর কংগ্রেস আন্দোলনসমূহের সাথে যুক্ত ছিলেন।
- যুক্তফ্রন্টের ২১-দফা কর্মসূচির অন্যতম প্রণেতা ছিলেন।
- তিনি আওয়ামী মুসলিম লীগ (পরবর্তীতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ) এর প্রতিষ্ঠাতা-নেতা ছিলেন।
- ১৯৫৩-১৯৫৮ সাল পর্যন্ত তিনি আওয়ামী লীগ এর সহ-সভাপতি ছিলেন।
আবুল মনসুর আহমেদের জীবন এবং কর্মকাণ্ড বাংলার ইতিহাস ও সাহিত্যে একটি উল্লেখযোগ্য অবদান। তাঁর ব্যঙ্গাত্মক লেখা এবং রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি আজও প্রাসঙ্গিক এবং অনুপ্রেরণাদায়ক।