মাদারীপুর: ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত জেলা
বাংলাদেশের ঢাকা বিভাগের অন্তর্গত মাদারীপুর জেলা একটি ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ অঞ্চল। কুমার নদীর উত্তর তীরে অবস্থিত এই জেলাটি এর সুন্দর প্রকৃতি, ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা এবং মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের জন্য পরিচিত। ১৪.২২ বর্গকিলোমিটার আয়তনের মাদারীপুর শহরের জনসংখ্যা প্রায় ৬২,৬৯০।
ঐতিহাসিক পটভূমি:
মাদারীপুরের নামকরণ হয়েছে প্রখ্যাত সুফি সাধক হযরত বদিউদ্দীন আহমেদ জিন্দা শাহ মাদারের নামানুসারে। চতুর্দশ শতাব্দীতে তিনি ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলাম ধর্ম প্রচারে এসেছিলেন এবং এই অঞ্চলে কিছুকাল অবস্থান করেছিলেন। এই অঞ্চল প্রাচীনকালে ইদিলপুর ও কোটালীপাড়া নামে পরিচিত ছিল এবং চন্দ্রদ্বীপ রাজ্যের অন্তর্গত ছিল। খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতাব্দীতে এটি ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য বিখ্যাত ছিল। গুপ্ত, পাল, সেন এবং মুঘল শাসনামলে এই অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। ব্রিটিশ শাসনামলে ১৮৫৪ সালে মাদারীপুর মহকুমা এবং ১৮৭৫ সালে মাদারীপুর পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৮৪ সালে মাদারীপুর একটি পূর্ণাঙ্গ জেলা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।
মুক্তিযুদ্ধে মাদারীপুরের অবদান:
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে মাদারীপুরের জনগণ অসাধারণ সাহস ও বীরত্বের পরিচয় দিয়েছিল। ১০ ডিসেম্বর মাদারীপুর শত্রুমুক্ত হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নৃশংস অত্যাচারের শিকার হয়েছিল অনেক নিরীহ মানুষ। মাদারীপুরে গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে যা মুক্তিযুদ্ধের ভয়াবহতার সাক্ষী।
ভৌগোলিক অবস্থান ও অর্থনীতি:
মাদারীপুরের অবস্থান ২২°৪১′০৯″ উত্তর অক্ষাংশ ও ৯০°৩৮′৪৬″ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে। সমুদ্র সমতল থেকে এর গড় উচ্চতা ১ মিটার। এখানে নারিকেল, সুপারি, খেজুর ও তালগাছ প্রচুর পরিমাণে জন্মায়। মাদারীপুরের খেজুরের গুড় এর একটি বিখ্যাত পণ্য। কৃষিই এখানকার অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি। মাছ ও জলজ সম্পদও এ অঞ্চলের আর্থিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
দর্শনীয় স্থান:
মাদারীপুরে হযরত শাহ মাদারের দরগাহ, আউলিয়াপুর নীলকুঠি, ঝাউদি গিরি, চরমুগুরিয়া বন্দর ইত্যাদি দর্শনীয় স্থান পর্যটকদের আকর্ষণ করে।
মাদারীপুরের ভবিষ্যৎ:
মাদারীপুরের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে ধারণ করে এই অঞ্চলের উন্নয়নে আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত। পর্যটন, কৃষি এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে উন্নয়নের মাধ্যমে মাদারীপুরের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতি সাধন করা সম্ভব।