বাংলাদেশের মাঠ প্রশাসন: একটি ঐতিহাসিক পর্যালোচনা
বাংলাদেশের মাঠ প্রশাসন, জেলা, উপজেলা (থানা), ইউনিয়ন পর্যায়ের প্রশাসনিক কাঠামোকে বোঝায়। এটি রাজস্ব আদায়, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, স্থানীয় উন্নয়ন, এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে নিয়োজিত। এই প্রশাসনিক কাঠামোর উৎপত্তি ও বিবর্তন একটি দীর্ঘ এবং জটিল ইতিহাসের সাথে জড়িত।
প্রাথমিক পর্যায়: অতি প্রাচীন কাল থেকেই রাজস্ব সংগ্রহ এবং রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণের স্বার্থে ভূখণ্ডকে বিভিন্ন প্রশাসনিক এককে ভাগ করা হতো। সুলতানি ও মুগল আমলে জেলা প্রশাসন কার্যকর ছিল। ব্রিটিশ আমলে মুগলকালীন জেলা ব্যবস্থা বহাল থাকে।
লর্ড কর্নওয়ালিস কোড (১৭৯৩): এই কোডের মাধ্যমে পঞ্চায়েত প্রথা বিলুপ্ত হয় যার ফলে গ্রামীণ আইন-শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হয়।
চৌকিদারি আইন (১৮৭০): আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নত করার জন্য কয়েকটি গ্রাম নিয়ে ইউনিয়ন গঠন করা হয়। পরবর্তীতে ইউনিয়ন স্থানীয় সরকারের একক হিসেবে গুরুত্ব পায়।
লর্ড রিপনের শাসনকাল (১৮৮০-১৮৮৪): স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা শক্তিশালী করা হয়।
মৌলিক গণতন্ত্র (১৯৫৯): জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও কালেক্টরকে ডেপুটি কমিশনারে নামকরণ করা হয়। স্থানীয় সরকারে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সম্পৃক্তি বৃদ্ধি পায়।
১৯৭১ পরবর্তী: বেসামরিক প্রশাসন পুনঃস্থাপনের জন্য ‘বেসামরিক প্রশাসন পুনরুদ্ধার কমিটি’ গঠিত হয়। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠিত হয়।
একক দলীয় শাসন (১৯৭৫): সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে জেলা গভর্নর প্রথা চালু করা হয়। তবে এই ব্যবস্থা অল্প সময়ের জন্য চালু থাকে।
উপজেলা প্রথা (১৯৮০): মহকুমার বিলুপ্তি এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর। উপজেলা পরিষদ গঠিত হয়, এবং বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তাদের উপর উপজেলা চেয়ারম্যানের প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়।
স্থানীয় সরকার আইনের পরিবর্তন (১৯৯০ এর দশক): উপজেলা প্রথা বাতিল ও পুনঃপ্রবর্তন সহ বিভিন্ন পরিবর্তন।
চট্টগ্রাম পার্বত্য জেলা: এই জেলার প্রশাসন ব্যবস্থা দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় ভিন্নতর, বিশেষ করে স্থানীয় সরকার গঠন এবং উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর সম্পৃক্ততা নিয়ে।
বর্তমান অবস্থা: বর্তমানে, বাংলাদেশের মাঠ প্রশাসন জেলা, উপজেলা (থানা), এবং ইউনিয়ন পর্যায়ের প্রশাসনিক কাঠামো নিয়ে গঠিত। এই ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং কার্যকরতা সম্পর্কে নিয়মিত তদারকি এবং পর্যালোচনা জরুরী। আরও তথ্য প্রাপ্তির সাথে সাথে আমরা এই লেখাটি আপডেট করব।