মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী (২ ফেব্রুয়ারি ১৯৪০ - ১৪ আগস্ট ২০২৩) ছিলেন একজন বাংলাদেশী ইসলামি পণ্ডিত, বক্তা এবং রাজনীতিবিদ। তিনি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে-আমীর ছিলেন এবং ১৯৯৬ এবং ২০০১ সালে পিরোজপুর-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকার বাহিনীর সদস্য হিসাবে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুক্ত থেকে মানবতাবিরোধী অপরাধে অংশগ্রহণের অভিযোগে তাকে ২০১৩ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল দোষী সাব্যস্ত করে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়। পরবর্তীতে, ২০২৩ সালের ১৪ আগস্ট ৮৩ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা যান। তার বিচার এবং দোষী সাব্যস্তকরণ নিয়ে দেশে ও বিদেশে ব্যাপক বিতর্ক ছিল।
মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর জন্ম ১৯৪০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি পিরোজপুরের ইন্দুরকানীর সাঈদখালি গ্রামে। তিনি তার বাবার প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসায় প্রাথমিক ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণ করেন এবং পরে ছারছিনা আলিয়া মাদ্রাসা ও খুলনা আলিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষা লাভ করেন। ১৯৭৯ সালে তিনি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করেন। ১৯৯৬ এবং ২০০১ সালের সাধারণ নির্বাচনে তিনি পিরোজপুর-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি বাংলা, উর্দু, আরবি, পাঞ্জাবি, ইংরেজি এবং ফরাসি ভাষায় দক্ষ ছিলেন। তার স্ত্রীর নাম শেখ সালেহা বেগম এবং তাদের চার সন্তান ছিল।
২০১১ সালে, মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, লুটতরাজ ও ধর্মান্তরের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের মামলা দায়ের করা হয়। ২০১৩ সালের ২৮শে ফেব্রুয়ারি আদালত ২০টি অভিযোগের মধ্যে ৮টিতে তাকে দোষী সাব্যস্ত করে এবং দুটি অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দেয়। পরবর্তীতে ২০১৪ সালের ১৭শে সেপ্টেম্বর সুপ্রীম কোর্ট তার সাজা আমৃত্যু কারাদণ্ডে পরিবর্তন করে। এই বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে দেশে এবং বিদেশে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া রায় এবং দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ নিয়ে বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যক্তি বিভিন্ন মত প্রকাশ করেছিলেন। কিছু সংস্থা রায়ের নিন্দা করেছে এবং অভিযোগগুলোকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল তাঁর বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল। অন্যদিকে, সাঈদীর অনুসারীরা তাঁর অপরাধের অভিযোগ অস্বীকার করে এবং তার বিচারকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অংশ বলে দাবি করেছিল। তার মৃত্যুর পরও তাঁর সমর্থক এবং বিরোধীদের মধ্যে মতবিরোধ অব্যাহত রয়েছে।