মাওলানা আবু বকর সিদ্দিকী (১৮৪৫-১৯২৮) ছিলেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের একজন বিখ্যাত ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব। তিনি ফুরফুরা দরবার শরীফের প্রতিষ্ঠাতা পীর ছিলেন এবং দুই বাংলার মুসলিমদের কাছে তাঁর গভীর সম্মান ছিল। তাঁর ধর্মীয় অবদানের জন্য তাঁকে 'আমীরে শরিয়ত' এবং 'চতুর্দশ হিজরীর মুজাদ্দিদ' বলে অভিহিত করা হয়। ইসলামের প্রথম খলিফা আবু বকরের বংশধর বলে ধারণা করা হয়।
তিনি ১৮৪৫ সালে পশ্চিমবঙ্গের হুগলী জেলার ফুরফুরায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আব্দুল মুক্তাদির সিদ্দিকী এবং মাতার নাম মুহব্বতুন নেসা বেগম। প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণের পর তিনি সিতাপুর মাদ্রাসা এবং মুহসিনিয়া মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেন। পরবর্তীতে কলকাতার জামালুদ্দিন শিক্ষা কেন্দ্র এবং নজর শাহ বেলায়েতীর নিকটে হাদিস, তাফসীর, ফিকাহ, হিকমাহ প্রভৃতি বিষয়ে শিক্ষা লাভ করেন।
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শেষ করে দীর্ঘ ১৮ বছর ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা করেন এবং একটি বৃহৎ গ্রন্থাগার গড়ে তোলেন। ১৮৯২ সালে তিনি মক্কা ও মদিনা যান এবং মদিনার মুহাদ্দিসদের নিকট হাদিস শাস্ত্রের সনদ লাভ করেন।
তার পৃষ্ঠপোষকতায় প্রায় ১১০০ মাদ্রাসা এবং ৭০০ মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির সদস্য ছিলেন এবং হাদিস পাঠদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বহু আলেম তার কাছে হাদিস শিক্ষা গ্রহণ করেছেন।
তিনি জজবা ও সুলুক উভয় পন্থাই আত্মস্থ করেছিলেন। ইলমে তাছাউফের শিক্ষার জন্য শাহ সুফি ফতেহ আলী ওয়াইসীর কাছে বাইয়াত গ্রহণ করেন।
উনিশ শতকের শেষভাগে মুসলিমদের মধ্যে বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক সমস্যা দেখা দিলে তিনি মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের জন্য কাজ করেন এবং শিরক, বিদআত প্রভৃতি দূর করার চেষ্টা চালান।
তার সময়ে কাজ করেছেন শামসুল উলামা গোলাম সালমানী, আল্লামা লুতফর রহমান বর্ধমানী, আল্লামা এসহাক বর্ধমানী, বেলায়েত হোসেন বীরভূমী, আবদুল ওয়াহেদ চাটগামী, মুহাম্মদ মঙ্গলকোটি বর্ধমানী, আব্দুল আউয়াল জৌনপুরী, কারামত আলী জৌনপুরী প্রমুখ। তিনি ১৯২৮ সালে ইন্তেকাল করেন।