মধু: এক অমৃতের নাম
মধু, প্রকৃতির এক অপূর্ব দান। শুধু মিষ্টি স্বাদের জন্য নয়, এর অসংখ্য ঔষধি গুণাবলী মানব সভ্যতাকে প্রাচীনকাল থেকেই আকর্ষণ করে আসছে। গ্রীক, মিশরীয়, হিন্দু, আরবী সভ্যতার ইতিহাসে মধু গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। আয়ুর্বেদ, ইউনানী ও লোকচিকিৎসায় মধুর ব্যবহার বহু প্রজন্ম ধরে চলে আসছে।
মধু উৎপাদন:
মধু উৎপাদন মূলত মৌমাছিদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল। লাখ লাখ মৌমাছি ফুলে ফুলে ঘুরে ফুলের রেণু ও মিষ্টি রস সংগ্রহ করে, তাদের পাকস্থলীতে এগুলো জমা হয়। মৌমাছির মুখ থেকে নিঃসৃত লালার সাথে মিশে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় মধু তৈরি হয়। পরে মুখ দিয়ে মৌচাকের প্রকোষ্ঠে এটি জমা করা হয়। বিভিন্ন ফুলের রস ও ঋতুর প্রভাব মধুর রং ও স্বাদে বিভিন্নতা আনে।
মধুর উপকারিতা:
মধুর উপকারিতা অগণিত। এটি শক্তি প্রদান করে, হজমে সাহায্য করে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, রক্তশূন্যতায় উপকারী, ফুসফুসের রোগ ও শ্বাসকষ্ট নিরাময়ে সহায়ক, অনিদ্রায় উপকারী, যৌন দুর্বলতায় উপকারী, মুখগহ্বরের স্বাস্থ্য রক্ষায় কাজে লাগে, পাকস্থলীর সুস্থতায় সহায়ক, শীতের ঠান্ডা থেকে রক্ষা করে, পানিশূন্যতা দূর করে, দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়, রূপচর্চায় কাজে লাগে, ওজন কমাতে সহায়তা করে, রক্ত পরিষ্কার করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়ক, ক্ষত সারাতে সহায়ক, ইত্যাদি।
মধু উৎপাদনকারীরা:
বাংলাদেশে মধু উৎপাদনকারীদের মধ্যে রয়েছেন অনেক ছোট ও বৃহৎ উদ্যোক্তা, সংগঠন ও সম্প্রদায়। সুন্দরবনের মাওয়ালী সম্প্রদায় ঐতিহ্যগতভাবে মধু সংগ্রহ ও বিক্রয় করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। এছাড়াও বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য মৌমাছি পালক ও মধু সংগ্রহকারী রয়েছেন। জাতীয় মধু বোর্ড মধু উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের সাথে জড়িত। বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান মধু সম্পর্কে গবেষণা ও উন্নত প্রযুক্তির প্রয়োগ নিয়ে কাজ করছে।
খাঁটি মধু চেনা:
বাজারে ভেজাল মধুর প্রচুরতা রয়েছে। খাঁটি মধু চেনার ক্ষেত্রে কিছু সহজ উপায় রয়েছে যেমন- পানিতে দ্রবীভূত হওয়া, আগুনে পোড়া, কাগজে ছাপ পড়া, ফ্রিজে না জমে থাকা ইত্যাদি। তবে বিশ্বস্ত উৎস থেকে মধু কেনাই সবচেয়ে নিরাপদ।
উপসংহার:
মধু প্রকৃতির অমূল্য উপহার। এর পুষ্টিগুণ ও ঔষধি গুণাবলীর কারণে এটি মানবজাতির কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মধু উৎপাদন ও এর ব্যবহারের মাধ্যমে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব। তবে ভেজাল মধু থেকে সাবধান থাকা এবং মধু গ্রহনের ক্ষেত্রে সঠিক পরিমাণ বজায় রাখা প্রয়োজন।