মওলানা আবুল কালাম আজাদ

আপডেট: ৬ জানুয়ারী ২০২৫, ২:১৭ এএম

মওলানা আবুল কালাম আজাদ (১৮৮৮-১৯৫৮): ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক অসাম্প্রদায়িক নেতা ও প্রথম শিক্ষামন্ত্রী

মওলানা আবুল কালাম আজাদ ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে একজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব। ১৮৮৮ সালের ১১ নভেম্বর মক্কায় জন্মগ্রহণকারী এই মুসলিম চিন্তাবিদ, লেখক, সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদ স্বাধীন ভারতের প্রথম শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন। তিনি হিন্দু-মুসলমান ঐক্যের প্রবক্তা ছিলেন এবং দ্বিজাতিতত্ত্বের তীব্র বিরোধী ছিলেন।

প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষা:

আজাদের পিতা মওলানা খায়রউদ্দীন আফগান বংশোদ্ভূত বাঙালি মুসলমান ছিলেন। ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহের পর তিনি মক্কায় চলে গিয়েছিলেন এবং সেখানে এক আরবীয় মহিলার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৮৯০ সালে তিনি পরিবারসহ কলকাতায় ফিরে আসেন। আজাদ আরবি, উর্দু, ফারসি, হিন্দি ও ইংরেজি ভাষায় দক্ষ ছিলেন। তিনি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভ করেননি, তবে ব্যক্তিগত অধ্যয়ন ও পাঠাভ্যাসের মাধ্যমে বিপুল জ্ঞানার্জন করেছিলেন।

রাজনৈতিক জীবন ও কাজ:

আজাদ খুব তাড়াতাড়ি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। তিনি জামালউদ্দীন আফগানির প্যান-ইসলামী মতবাদ ও স্যার সৈয়দ আহমদ খানের আলীগড় আন্দোলনের দ্বারা অনুপ্রাণিত হন। তিনি বিভিন্ন মুসলিম দেশ ভ্রমণ করেন এবং ১৯১২ সালে কলকাতা থেকে 'আল-হেলাল' নামে একটি উর্দু সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশ শুরু করেন। এ পত্রিকা ব্রিটিশ শাসনের তীব্র সমালোচনা করত। ব্রিটিশ সরকারের দ্বারা নিষিদ্ধ হওয়ার পর তিনি 'আল-বালাগ' নামে আর একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন।

আজাদ ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃস্থানীয় সদস্য ছিলেন। তিনি ১৯২৩ সালে দিল্লি ও ১৯৪০ সালে রামগড়ে কংগ্রেস অধিবেশনের সভাপতিত্ব করেন। ১৯৪০-৪৫ সালে তিনি কংগ্রেসের সভাপতি থাকাকালীন ভারত ছাড়ো আন্দোলনে অংশ নেন এবং কারাবরণ করেন। তিনি ক্রিপস মিশন এবং কেবিনেট মিশনের আলোচনায় অংশ নেন। ভারত বিভাগের তীব্র বিরোধী ছিলেন আজাদ। তিনি হিন্দু-মুসলমান ঐক্যের জন্য কাজ করে গেছেন।

স্বাধীন ভারতের শিক্ষামন্ত্রী:

স্বাধীনতার পর ১৯৪৭ সালে তিনি ভারতের প্রথম শিক্ষামন্ত্রী হন এবং ১৯৫৮ সালে মৃত্যু পর্যন্ত এ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। এই সময় তিনি দেশে শিক্ষাব্যবস্থায় ব্যাপক সংস্কার সাধন করেন এবং ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (আইআইটি) এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) স্থাপন করেন।

মৃত্যু ও স্মৃতি:

১৯৫৮ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি মওলানা আবুল কালাম আজাদ মৃত্যুবরণ করেন। ১৯৯২ সালে ভারত সরকার তাঁকে মরণোত্তর ভারতরত্ন উপাধিতে ভূষিত করে। তাঁর জন্মদিন জাতীয় শিক্ষা দিবস হিসেবে পালিত হয়।

মূল তথ্যাবলী:

  • মক্কায় জন্ম, কলকাতায় বেড়ে ওঠা
  • হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের প্রবক্তা
  • স্বাধীন ভারতের প্রথম শিক্ষামন্ত্রী
  • আল-হেলাল ও আল-বালাগ পত্রিকার সম্পাদক
  • ভারত বিভাগের তীব্র বিরোধী
  • মরণোত্তর ভারতরত্ন

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।