ভুট্টা: এক অমূল্য খাদ্যশস্য
ভুট্টা (বৈজ্ঞানিক নাম: Zea mays) এক প্রকারের গুরুত্বপূর্ণ খাদ্যশস্য যা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে চাষ হয়। এর উৎপত্তি মেসোআমেরিকা, আজ থেকে প্রায় ৯০০০ বছর আগে মেক্সিকোর দক্ষিণাঞ্চলে আদিবাসীরা এটি প্রথম চাষ শুরু করেছিল বলে মনে করা হয়। ইউরোপীয়দের আমেরিকা আবিষ্কারের পর থেকে ভুট্টার চাষ বিশ্বের অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়ে।
পুষ্টিমান: ধান ও গমের তুলনায় ভুট্টায় প্রোটিন (আমিষ) ও অন্যান্য পুষ্টিগুণ বেশি। প্রায় ১১% প্রোটিন থাকে ভুট্টায় এবং প্রয়োজনীয় অ্যামিনো এসিড, ট্রিপটোফ্যান ও লাইসিন এর উল্লেখযোগ্য পরিমাণ আছে। হলুদ রঙের ভুট্টার দানায় প্রতি ১০০ গ্রামে প্রায় ৯০ মিলিগ্রাম ক্যারোটিন (ভিটামিন এ) থাকে।
ব্যবহার: ভুট্টার দানা মানুষের খাদ্য হিসেবে এবং গাছ ও পাতা গবাদিপশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। হাঁস-মুরগি ও মাছের খাদ্য হিসেবেও এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। শুধুমাত্র পশু, মুরগি ও মাছের চাহিদা মেটানোর জন্যই প্রচুর পরিমাণ ভুট্টার প্রয়োজন।
চাষাবাদ: ভুট্টা চাষের জন্য বেলে দোআঁশ ও দোআঁশ মাটি উপযুক্ত। জমিতে পানি জমতে দেওয়া যাবে না। জুমচাষেও ভুট্টার আবাদ হয়। সঠিক সার ব্যবহার (ইউরিয়া, জিঙ্ক সালফেট, বোরন সার এবং গোবর সার) ও সেচ ব্যবস্থাপনা ভালো ফলন নিশ্চিত করে। রবি মৌসুমে উচ্চ ফলনশীল জাতের জন্য সেচ অত্যাবশ্যক।
রোগ ও পোকামাকড়: বিভিন্ন ধরণের ছত্রাকজনিত রোগ (যেমন: পিথিয়াম, রাইজোকটনিয়া, ফিউজেরিয়াম) এবং পোকামাকড়ের (যেমন: কাটুই পোকা) আক্রমণ ভুট্টার ফলনে ক্ষতি করতে পারে। রোগ প্রতিরোধী জাতের ব্যবহার ও সঠিক কীটনাশক ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ।
সংগ্রহ: মোচা চকচকে খড়ের রং ধারণ করলে এবং পাতা কিছুটা হলদে হলে ভুট্টা সংগ্রহের উপযুক্ত সময়। মোচা ৭৫-৮০% পরিপক্ব হলে ভুট্টা সংগ্রহ করা উচিত।
বাংলাদেশে ভুট্টা: বাংলাদেশে খরিফ ও রবি মৌসুমে ভুট্টার চাষ হয়। তবে, উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য আধুনিক চাষ পদ্ধতি ও উন্নত জাতের ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। আরও তথ্যের জন্য কৃষি বিভাগের সাথে যোগাযোগ করা যেতে পারে।