ভারতের গৌড়নগর: একটি ঐতিহাসিক ভূমিকা
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মালদহ জেলায় অবস্থিত গৌড়নগর, প্রাচীনকালের এক গুরুত্বপূর্ণ জনপদ ও বাংলার এককালীন রাজধানী। বর্তমানে এটি একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত নগর, যার অংশবিশেষ বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায়ও বিস্তৃত। গৌড়নগর 'লক্ষণাবতী' বা 'লখনৌতি' নামেও পরিচিত ছিল। গঙ্গানদীর পূর্ব তীরে, রাজমহল থেকে ৪০ কিমি নীচে এবং মালদহ থেকে ১২ কিমি দক্ষিণে এর অবস্থান ছিল, যদিও বর্তমানে নদীর প্রবাহ অনেক দূরে সরে গেছে।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব:
- পাল রাজবংশ (৮ম-১২শ শতাব্দী): পাল রাজাদের অধীনে গৌড়নগর বাংলার রাজধানী হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পাল রাজারা নিজেদের 'বঙ্গেশ্বর' ও 'গৌড়েশ্বর' উপাধিতে ভূষিত করতেন।
- সেন রাজবংশ (১২শ-১৩শ শতাব্দী): সেন রাজাদের আমলেও গৌড়নগর উন্নতি লাভ করে। লক্ষণ সেনের নামানুসারে এর নামকরণ হয় লক্ষণাবতী।
- মুসলিম শাসন (১২শ শতাব্দী থেকে): ১১৯৮ খ্রিস্টাব্দে মুসলিম শাসকরা গৌড় অধিকার করার পরও এটি বাংলার রাজধানী হিসাবে বহাল থাকে। ১৩৫০ খ্রিস্টাব্দে কিছুদিনের জন্য রাজধানী পাণ্ডুয়ায় স্থানান্তরিত হলেও ১৪৫৩ খ্রিস্টাব্দে আবার গৌড়ে ফিরে আসে এবং 'জান্নাতাবাদ' নামে পরিচিত হয়। ১৫০০ খ্রিস্টাব্দে এটি বিশ্বের অন্যতম জনবহুল শহর হিসেবে পরিগণিত হয়েছিল।
- মোগল আমল: ষোল শতকে মোগল সম্রাট হুমায়ুন গৌড়ের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে এর নামকরণ করেন জান্নাতাবাদ।
স্থাপত্য:
গৌড়নগরের ধ্বংসাবশেষে অনেক ঐতিহাসিক স্থাপত্যের নিদর্শন দেখা যায়, যেমন:
- বড় সোনা মসজিদ
- ছোট সোনা মসজিদ
- দাখিল দরওয়াজা
- লুকোচুরি দরওয়াজা
- ফিরোজ মিনার
- কদম রসুল সৌধ
- চামকান মসজিদ
- লোটন মসজিদ
অন্যান্য তথ্য:
গৌড়নগরের ইতিহাস এবং স্থাপত্য সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা এবং ঐতিহাসিক লেখা থেকে পাওয়া যাবে। এই প্রতিবেদনে উল্লেখিত সকল তথ্য উইকিপিডিয়া ও অন্যান্য উৎস থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। গৌড়নগরের ইতিহাস ও স্থাপত্যের বিস্তৃত চিত্র প্রকাশ করার জন্য আরও গবেষণা করা প্রয়োজন।