বেনজির ভুট্টো: পাকিস্তানের অদম্য নেত্রী
বেনজির ভুট্টো (২১ জুন, ১৯৫৩ - ২৭ ডিসেম্বর, ২০০৭) পাকিস্তানের ইতিহাসে একজন অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। তিনি দুইবার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন এবং তার রাজনৈতিক জীবন ছিল উত্থান-পতনের এক অবিরাম ধারা। তার বাবা, পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) প্রতিষ্ঠাতা জুলফিকার আলী ভুট্টো, এবং স্বামী, পরবর্তীতে পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি আসিফ আলী জারদারি, তার রাজনৈতিক জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
১৯৫৩ সালের ২১ জুন এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণকারী বেনজির, হার্ভার্ড এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা লাভ করেন। ১৯৭৭ সালে দেশে ফিরে তিনি সেনা শাসক জিয়াউর রহমানের শাসনামলে রাজনীতিতে যোগদান করেন। তার পিতার রাজনৈতিক হত্যার পর বেনজির রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় হন এবং জিয়া সরকারের বিরোধিতা শুরু করেন। এর ফলে বারবার তাকে গ্রেপ্তার ও কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
১৯৮০-এর দশকে তিনি লন্ডনে অবস্থান করেন এবং ১৯৮৬ সালে পাকিস্তানে ফিরে আসেন। তার সাহসী রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং জনসমর্থনের বলয়ে তিনি ১৯৮৮ সালে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। তিনিই ছিলেন পাকিস্তানের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী। তার প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় ১৯৯০ সালে কন্যা বখতাওয়ার ভুট্টো জারদারির জন্ম হয়। ১৯৯০ সালে তাকে বরখাস্ত করা হয়। পরবর্তীতে, ১৯৯৩ সালে আবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হলেও, ১৯৯৬ সালে তাকে পুনরায় বরখাস্ত করা হয়। তার রাজনৈতিক জীবনে অনেক বার তাকে দুর্নীতির অভিযোগে তদন্তের মুখোমুখি হতে হয়েছিল।
আট বছরের স্বেচ্ছা নির্বাসন কাটিয়ে ২০০৭ সালের অক্টোবরে বেনজির পাকিস্তানে ফিরে আসেন। কিন্তু ২০০৭ সালের ২৭ ডিসেম্বর রাওয়ালপিন্ডিতে এক নির্বাচনী সমাবেশের পর আত্মঘাতী বোমা হামলায় তিনি নিহত হন। এই ঘটনা পাকিস্তানের রাজনীতিতে আরও অস্থিরতা আনে।
বেনজির ভুট্টোর রাজনৈতিক জীবন ছিল পাকিস্তানের রাজনীতির ইতিহাসে একটি মাইলফলক। তিনি মহিলাদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তার মৃত্যু পাকিস্তানের জনগোষ্ঠীর মাঝে গভীর শোক এবং অনেক প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছে।
keyInformationList: [