বিশ্বনাথ: এক নাম, দুটি পরিচয়
বিশ্বনাথ নামটি দুটি ভিন্ন প্রসঙ্গে ব্যবহৃত হয়: একজন মধ্যযুগীয় সংস্কৃত কবি ও আলঙ্কারিক এবং সিলেটের একটি উপজেলা। এই লেখায় আমরা উভয় বিশ্বনাথ-এরই আলোচনা করবো।
- *বিশ্বনাথ কবিরাজ:**
১৪শ শতাব্দীর সংস্কৃত কবি ও আলঙ্কারিক বিশ্বনাথ কবিরাজের জন্ম ও মৃত্যুর সঠিক তারিখ জানা না গেলেও, তাঁর সময়কাল প্রায় ১৩০০-১৩৮০ খ্রিস্টাব্দ বলে মনে করা হয়। তাঁর পিতা ছিলেন সংস্কৃত পন্ডিত চন্দ্রশেখর এবং পিতামহ কলিঙ্গরাজ নরসিংহের সভাসদ নারায়ণ। বিশ্বনাথের বাঙালিত্ব নিয়ে কিছু মতবিরোধ থাকলেও, তিনি বঙ্গদেশের অধিবাসী ছিলেন বলেই অধিকাংশের ধারণা। ‘সাহিত্যদর্পণ’ নামক তাঁর বিখ্যাত অলঙ্কারগ্রন্থ আজও সংস্কৃত সাহিত্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ। ‘বাক্যং রসাত্মকং কাব্যম্’ (সরস বাক্যই কাব্য) এই সংজ্ঞাটি সাহিত্যদর্পণের মধ্যে উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও তিনি কুবলয়াশ্বচরিত, রাঘববিলাস, চন্দ্রকলা, প্রভাবতীপরিণয়, প্রশস্তিরত্নাবলী ইত্যাদি কাব্যনাটক রচনা করেছেন। উৎকল রাজসভা থেকে তিনি ‘কবিরাজ’ উপাধি পেয়েছিলেন।
- *বিশ্বনাথ উপজেলা:**
সিলেট জেলার বিশ্বনাথ উপজেলা ২১৩.১৬ বর্গ কিমি আয়তনের। এটি ২৪°৪৪´ থেকে ২৪°৫৬´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°৩৯´ থেকে ৯১°৫০´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত। এর উত্তরে সিলেট সদর ও ছাতক উপজেলা, দক্ষিণে বালাগঞ্জ, পূর্বে দক্ষিণ সুরমা এবং পশ্চিমে ছাতক ও জগন্নাথপুর উপজেলা অবস্থিত। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, এর জনসংখ্যা ছিল ২৩২৫৭৩। মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ বিভিন্ন ধর্মের মানুষ এখানে বসবাস করেন। সুরমা নদী, কোনাউড়া, নলডুবি ও চাউলবুনি বিল এ উপজেলার উল্লেখযোগ্য জলাশয়। বিশ্বনাথ থানা ১৯২২ সালে গঠিত হয় এবং ১৯৮৩ সালে তা উপজেলায় রূপান্তরিত হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকবাহিনীর নৃশংসতা এখানেও ছিল; একটি গণকবর এখানে অবস্থিত। কৃষি, ব্যবসা, চাকুরী ইত্যাদি এ উপজেলার অর্থনীতির মূল ভিত্তি। এখানে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানও আছে। সিতুলী দেবীর মন্দির, হাসনরাজার বাড়ি, গৌড় গোবিন্দের সাতপাড়ি দিঘি ও জাহাজের মঞ্জিল এখানকার প্রাচীন নিদর্শনাদি।