বালবেক: লেবাননের সূর্য শহরের ইতিহাস ও গৌরব
লেবাননের বেকা উপত্যকায়, লিটানি নদীর পূর্ব তীরে, বৈরুত থেকে প্রায় ৬৭ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত বালবেক (Baalbek) শহরটি প্রাচীনকাল থেকেই ইতিহাস ও স্থাপত্যের এক অপূর্ব সমাহার বহন করে চলেছে। আরবি ভাষায় ‘বা'লাবাক্ক’ নামে পরিচিত এই শহরটি গ্রীক ও রোমান আমলে ‘হেলিওপোলিস’ (সূর্য শহর) নামে পরিচিত ছিল। ১৯৯৮ সালের হিসেবে এখানকার জনসংখ্যা ছিল ৮২,৬০৮, যেখানে বেশিরভাগই শিয়া মুসলিম, এবং অপরাপর সুন্নি মুসলিম ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করে।
- *ঐতিহাসিক গুরুত্ব:**
বালবেকের মন্দির কমপ্লেক্স বিশ্বের দুটি বৃহত্তম ও অসাধারণ রোমান মন্দিরের ধ্বংসাবশেষের আবাস। বাখুস ও জুপিটারের মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ ১৯৮৪ সালে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে ঘোষিত হয়। প্রাচীনকালে লিটানি ও আসি নদীর সান্নিধ্যে অবস্থানের কারণে এটি ‘দুই নদীর উৎস’ নামেও পরিচিত ছিল। ১৯২০ সালে এখানে উগারিটিক বাল চক্র ও সর্প মন্ত্র আবিষ্কৃত হয়, যা এর প্রাচীনত্বের সাক্ষ্য বহন করে।
- *নামকরণের ইতিহাস:**
বালবেক নামটির উৎপত্তি নিয়ে বেশ কিছু মতামত রয়েছে। কোন কোন মতে এর অর্থ ‘বেকার বাআল’ (বেকার প্রভু) অথবা ‘সূর্যের শহর’। আবার কোনো মতে এটি ‘লিটানি নদীর উৎসের প্রভু’ বা ‘প্রভু বাচ্চাস’ এর সংক্ষিপ্ত রূপ। ১৯ শতকে কিছু বাইবেলীয় প্রত্নতাত্ত্বিক একে জোশুয়ার বইয়ে উল্লেখিত ‘বালগাদ’ শহরের সাথে সংযুক্ত করার চেষ্টা করেছিলেন।
- *স্থাপত্য ও ধর্ম:**
গ্রীক ও রোমান আমলে হেলিওপোলিস নামে পরিচিত বালবেকে সূর্য দেবতার উপাসনা করা হত। স্থানীয় সেমেটিক দেবতা বাআল ও হাদাদকে জিউস বা জুপিটারের সাথে তুলনা করা হত। বালবেকের মন্দিরগুলির পরিকল্পনা ও বিন্যাসে স্থানীয় প্রভাব স্পষ্ট। রোমান সাম্রাজ্যের সময় বালবেকের মন্দিরগুলো বিশাল আকার ও জাঁকজমকের জন্য বিখ্যাত ছিল।
- *বর্তমান অবস্থা:**
আজ বালবেক লেবাননের একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর হিসেবে বিদ্যমান। ইতিহাস, স্থাপত্য ও প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্বের কারণে এটি পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় স্থান। তবে, লেবাননের রাজনৈতিক অস্থিরতা এর উপর প্রভাব ফেলেছে। তবুও, বালবেকের ঐতিহাসিক ঐশ্বর্য আজও মানুষকে মুগ্ধ করে।