বাংলা একাডেমি

বাংলা একাডেমি: বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ধারক ও বাহক

বাংলাদেশের ভাষা সংস্কৃতির কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে বাংলা একাডেমি দীর্ঘদিন ধরে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের চর্চা, সংরক্ষণ ও প্রসারে অতুলনীয় অবদান রেখে আসছে। ১৯৫৫ সালের ৩রা ডিসেম্বর (১৭ই অগ্রহায়ণ, ১৩৬২ বঙ্গাব্দ) প্রতিষ্ঠিত এই প্রতিষ্ঠানটি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমান বাংলাদেশ) বাংলা ভাষা আন্দোলনের উত্তাপে জন্ম নেয়। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের পর বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের উন্নয়নের জন্য একটি আধুনিক প্রতিষ্ঠান গঠনের দাবী উঠে এবং সেই দাবীরই ফসল বাংলা একাডেমি।

প্রতিষ্ঠার পেছনে ডঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতো বিশিষ্ট ব্যক্তিদের অবদান অনেক বেশী । তিনি ১৯৪৮ সালে পূর্ব পাকিস্তান সাহিত্য সম্মেলনে ভাষা সংক্রান্ত একাডেমি প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেন। এছাড়া দৈনিক আজাদ পত্রিকা জনমত সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রাথমিকভাবে বর্ধমান হাউজে একাডেমির সদর দপ্তর স্থাপিত হয়, যা বর্তমানে একটি ‘ভাষা আন্দোলন জাদুঘর’ হিসেবে কাজ করে।

একাডেমির প্রথম সচিব ছিলেন মুহম্মদ বরকতুল্লাহ এবং প্রথম পরিচালক ছিলেন অধ্যাপক ডঃ মুহম্মদ এনামুল হক। একাডেমির প্রথম প্রকাশনা ‘বাংলা একাডেমি পত্রিকা’ এবং প্রথম বই ছিল আহমদ শরীফ সম্পাদিত ‘লায়লী-মজনু’। স্বাধীনতার পর একাডেমির কাজের পরিসর বৃদ্ধি পায় এবং ১৯৭৪ সাল থেকে বৃহৎ আকারে বইমেলা শুরু হয়। বর্তমানে ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’ একাডেমির একটি বিখ্যাত উদ্যোগ।

বাংলা একাডেমি বিভিন্ন সাহিত্য পুরস্কার ও সম্মানসূচক ফেলোশিপ প্রদানের মাধ্যমে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের উন্নয়নে অবদান রাখে। বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরষ্কার, স্বাধীনতা পুরষ্কার (২০১০) ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। একাডেমির ৮টি বিভাগ রয়েছে যা বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পাদন করে। এছাড়াও একাডেমি গবেষণা, প্রকাশনা, অনুবাদ ও সংস্কৃতির বিকাশে কাজ করে। বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলা একাডেমি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অমূল্য ধারক ও বাহক হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে।

মূল তথ্যাবলী:

  • ১৯৫৫ সালে প্রতিষ্ঠিত
  • বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের চর্চা, সংরক্ষণ ও প্রসার
  • অমর একুশে গ্রন্থমেলার আয়োজন
  • বিভিন্ন সাহিত্য পুরষ্কার ও সম্মাননা প্রদান
  • সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীন স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান