বরিশাল: বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক নগরী। কীর্তনখোলা নদীর তীরে অবস্থিত এই শহরটি বরিশাল বিভাগের প্রশাসনিক সদর। মোগল আমলে লবণ চৌকি হিসেবে এর উত্থান ঘটে। ১৮০১ সালে বাকেরগঞ্জ জেলার সদর দপ্তর বরিশালে স্থানান্তরিত হলে শহরটির গুরুত্ব ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। দেশের খাদ্য উৎপাদনে বরিশালের অবদান অপরিসীম। এটি দেশের অন্যতম প্রাচীন ও গুরুত্বপূর্ণ নদীবন্দরের অধিকারী। ডিজিটাল জনশুমারী ২০২২ অনুযায়ী, আয়তনে দেশের ১০ম এবং জনসংখ্যায় ১২তম বৃহত্তম মহানগর বরিশাল।
বরিশাল নামকরণের পেছনে বেশ কিছু কিংবদন্তী প্রচলিত আছে। একটি কিংবদন্তী অনুযায়ী, এখানে প্রচুর বৃহৎ শাল গাছ ছিল, যার কারণে এর নামকরণ হয় বরিশাল (বড়+শাল)। আরেকটি জনশ্রুতি অনুযায়ী, গিরদে বন্দরে নবাবদের বৃহৎ লবণের চৌকি ছিল, যা ইংরেজ ও পর্তুগীজ বণিকরা 'বরিসল্ট' (বড়+লবণ) বলে ডাকত। কিছু কিংবদন্তী পর্তুগীজদের বেরি ও শেলীর প্রেমের সাথেও বরিশালের নামকরণের জড়িত।
ভৌগোলিক অবস্থানের দিক থেকে, বরিশাল ২১° থেকে ২৩° উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯° থেকে ৯১° পূর্ব দ্রাঘিমায় অবস্থিত। শহরটির আয়তন ৯৩.৬৩ বর্গ কিমি। ২০০১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী, বরিশালের জনসংখ্যা ছিল ৩,২৮,২৭৮, যার ৫১.৬৩% পুরুষ এবং ৪৮.৩৭% নারী। সাক্ষরতার হার ৭৫.৩%, যা জাতীয় গড়ের চেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে বেশী। ধর্মীয়ভাবে ৮৯.৩০% মুসলিম, ৯.৭% হিন্দু, ০.৯৮% খ্রিস্টান এবং ০.০১% বৌদ্ধ বাসিন্দা রয়েছে।
বরিশালের অর্থনীতি মূলত কৃষি, বাণিজ্য ও পরিবহনের উপর নির্ভরশীল। ইলিশ মাছের জন্য বরিশাল বিখ্যাত। এছাড়াও, বরিশালের লবণ, পাট এবং বিভিন্ন কৃষিপণ্যের উৎপাদনও উল্লেখযোগ্য। শহরটিতে বহুসংখ্যক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারী ও বেসরকারী হাসপাতাল আছে।
ঐতিহাসিক ঘটনার দিক থেকে, ১৯০৬ সালে বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনের সময় বরিশালে ব্রিটিশ পুলিশের লাঠিচার্জের ঘটনা বিখ্যাত। বরিশাল মুক্তিযুদ্ধেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। বরিশালের কীর্তনখোলা, তেঁতুলিয়া, হরিণঘাটা, বুড়ীশ্বর, গলাচিপা, বলেশ্বরী, জয়ন্তি, বিশখালী ও মেঘনা নদী এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে অবদান রেখেছে। বরিশালের জনসাধারণের ঐতিহ্যগত সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যবাহী জীবনযাত্রা একটি আকর্ষণীয় বিষয়।